আমাদের সমাজব্যবস্থায় মা প্রধান ছিলেন। মা অর্থে নারীই প্রধান ছিলেন। নারী মানে জন্মদাত্রী। তিনি যুগ-যুগান্তর ধরে প্রজন্ম লালন-পালনে প্রধান ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই শব্দ দুর্বল হতে পারে কেমন করে?
অর্থনৈতিক জরিপে নারীর অংশগ্রহণকে পিছিয়ে দেখানোর অর্থ এই নয় যে, সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র শুধু অর্থের ওপর ভিত্তি করে চলে। যেহেতু, সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক, সেই অর্থে অর্থনৈতিক খাতে কার্যত পুরুষের অংশগ্রহণ বেশি।
তবে, অর্থনৈতিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেও এগিয়ে যাচ্ছে। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারগুলো পুরুষতান্ত্রিক পরিবারে রূপান্তর হয়ে আবার সমঅবস্থানে ফেরার পথে রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী অবহেলিত হয়েছে, শোষিত হয়েছে। এজন্য ‘নারী’ শব্দটিকে আজকের সমাজ ব্যবস্থায়ও দুর্বল মনে করা হচ্ছে।
অথচ, ‘নারী’ নৃতাত্ত্বিকভাবেই একটি শক্তিশালী শব্দ, যা মানবজাতির অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। স্নেহ, মায়া, মমতা, শাসনে নারী অতুলনীয়। কর্মী হিসেবে সে মনোযোগী, সুশৃঙ্খল। এজন্যই বর্তমান কোম্পানিগুলোতে নারী কর্মীদের নিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী কর্মীদের মধ্যে কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কম।
শরীরবৃত্তীয়ভাবে তাদেরকে বেশ কয়েকটি জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এগুলো দুর্বলতা নয়, বরং মানবজাতির টিকে থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রতিযোগিতা করেই কর্মস্থলে নারী এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবারে দায়িত্ব পালন করছে। আজকাল দেখা যাচ্ছে, হেন পেশা নেই, যেখানে নারীর উপস্থিতি নেই।
তারপরও নারীর ক্ষমতায়ন আশানুরূপ হয়নি। কেন, হয়নি? তার কারণ সমাজ তার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি।
চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোতে নারীর কাজ করার সক্ষমতা থাকার পরেও পারিবারিক এবং সামাজিক বাধার মুখে অনেককে থেমে যেতে হয়। সবকিছুর পরেও পরিবার রক্ষার প্রথম এবং প্রধান সামাজিক দায় নারীর।
নারী এই দায় থেকে সরে গেলে আমাদের জনপ্রবাহ থেমে যাবে। তাই, প্রজন্মের সুরক্ষায় নারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নারী-পুরুষ উভয়ের।
অনেক সময় নারীও নারীর পথে বাধা সৃষ্টি করেন। এতে সামগ্রিক অর্থে গোটা নারীসমাজকেই পিছিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যেক মানুষের প্রথম জন্মঋণ একজন নারীর কাছে। এই শব্দটিকে কোনোভাবে অবলা, অবহেলা, অপমান কিংবা দুর্বল ভাবা উচিত না। যারা দুর্বল অর্থে নারী শব্দটি প্রয়োগ করেন, তারা এর শক্তির উৎস খোঁজ করলেই দেখবেন, এই শব্দের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে।
সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভালো-মন্দের দায় ও দায়িত্ব নারী-পুরুষ উভয়ের। অনেক সময় এককভাবে নারীকে অপবাদ দেওয়া হয়, যা বর্তমান সমাজব্যবস্থার সঙ্গে একেবারে বেমানান। এটা অন্যায়।
পরিবারে, সমাজে, কর্মস্থলে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হোক, নারী দিবসে এই প্রার্থনা। সব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান।