শোবিজ অঙ্গন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ সবসময়ই বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন এফডিসির গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি করেছে। নির্বাচনে কে জিতবে এ নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ।
রাত পোহালেই শিল্পী সমিতির নির্বাচন। অর্থাৎ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোটগ্রহণ। প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের আগে যদিও বলা যাচ্ছে না কাদের গলায় জয়ের মালা উঠবে, তবে তফসিল ঘোষণার পর যেসব আলোচনা বা সমালোচনা হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা অনুমান করাই যায়! এবারের নির্বাচনের সমীকরণ অনেকটাই নির্ভর করছে ১০২ জন ভোটারের উপর।
২০২০-২০২১ নির্বাচনে পূর্ণ সদস্যপদ থেকে ১৮৪ জন বাদ পড়া শিল্পী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। বিভিন্ন সময় মিশা সওদাগর-জায়েদ খানের নামে তারা তুলোধুনো কম করেন নি। তাদের ভোট প্রদান করার অনুমতি না থাকায় সেবার মৌসুমী, মিশা সওদাগরের বিপরীতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। ২০২২-২০২৩ মেয়াদের নির্বাচনে বাদ পড়া ১৮৪ জন শিল্পী ইলিয়াস-কাঞ্চন নিপুণের পক্ষ নেন। তারা পূর্ণ সদস্যপদ পেতে আদালতের শরণাপন্ন হন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এবার এই বাদ পড়া শিল্পীর মধ্যে ১০৩ জন সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা যান। বাকিরা এবার ভোট দিতে পারবেন। নতুন করে সদস্য হয়েছেন ৩০ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে শিল্পী সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭০ জন।
২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে নিপুণ আক্তার নেতৃত্বাধীন প্যানেলে সভাপতি পদে লড়ছেন সোনালি সময়ের নায়ক মাহমুদ কলি। এছাড়া এ প্যানেলে নেই কোনো চমক। চমক না থাকলেও তাদের ট্রামকার্ড ১০২ জন ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া সদস্য। জোট বেধে এই শতভোট নিপুণের পক্ষে রায় দিলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধারণা করছেন চলচ্চিত্রে সংশ্লিষ্টরা। গত দুই বছরে শিল্পীদের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন নিপুণ আক্তার। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় তালি পেয়েছেন, আবার পেয়েছেন গালিও। অন্যদিকে মাহমুদ কলি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সফল দুইবারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যদিও গত ৩০ বছরে তার অভিনীত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানেও তার দেখা মেলিনি। ৩০ বছরে সংগঠনের নতুন সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় কতটা রয়েছে তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। এদিকে নিপুণের সঙ্গে নেই ফেরদৌস, রিয়াজ, সাইমনের মতো তারকারা। এমনকি তাদের কেউ-ই ভোটযুদ্ধেও অংশ নেননি।
২০২৪-২৫ মেয়াদের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মাহমুদ কলি-নিপুণ আক্তার প্যানেলের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মিশা সওদাগর-মনোয়ার হোসেন ডিপজল। হ্যাভিওয়েট এই দুই প্রার্থী গত ৩০ বছর ধরে টানা চলচ্চিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। মিশা সওদাগর গত ৩০ বছরে এক-দু’বার বাদে শিল্পী সমিতির কোনো না কোনো পদে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে মনোয়ার হোসেন ডিপজল চলচ্চিত্রে দানবীর হিসেবেই পরিচিতি। তিনি শিল্পী সমিতির সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি এই সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কথিত আছে, এফডিসির সকল সংগঠনের পিকনিক বা যেকোনো অনুষ্ঠানে ডিপজল মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকেন। এছাড়া শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিপদে-আপদে সারাবছরই ডিপজল পাশে দাঁড়ান। এবারের নির্বাচনে মিশা-ডিপজলের চমক নিপুণের দুর্গে হানা।
২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে কাঞ্চন-নিপুণের ২১ জনের পরিষদ একাট্টা হয়ে নির্বাচনি মাঠে ছিলেন। এবার এদের অর্ধেকের বেশি সদস্য নিপুণের সঙ্গে নেই। এদের কেউ কেউ সরাসরি ডিপজল-মিশা প্যানেলে নির্বাচন করছেন আবার অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নিপুণের ট্রাম কার্ড ১০২ জন শিল্পী। বাদ পড়া এই শিল্পীর তালিকায় ছিলেন ফিরোজ শাহী। তিনি সামনে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার তিনি মিশা-ডিপজলের প্যানেলে থেকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া এই বাদ পড়া শিল্পীদের জামাল পাটোয়ারি, মিজানসহ একাংশ মিশা-ডিপজলের প্যানেলের হয়ে কাজ করছেন। এই অংশ ডিপজলের প্যানেলে ভোট দিলে নির্বাচনের সমীকরণ ডিপজলের পক্ষে যাবে। তাছাড়া ডিপজলের আলাদা ভোট ব্যাংক রয়েছে।
গত নির্বাচনে ফাইট ডিরেক্টের আরমান কাঞ্চন-নিপুণের প্যানেলের হয়ে লড়েছেন। স্বাভাবিক কারণে ফাইটের একটা বড় অংশ কাঞ্চন-নিপুণদের ভোট দিয়েছেন। সেই আরমান এবার মিশা-ডিপজলের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। জয়-পরাজয়ের এই সমীকরণের শেষ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা এসেছে— শিল্পী সমিতির সদস্য ব্যতীত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোন সংগঠনের সদস্যরা এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালক, প্রযোজকসহ অন্যরা। তাদের অভিযোগের তীর নিপুণের দিকে। কারো কারো দাবি, নিপুণ আক্তার এসব করিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েছে নিপুণের প্যানেল।
নির্বাচনে প্রার্থীদের মতভেদ থাকবেই। ভোটারদেরও মান-অভিমান থাকবে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটবে। কিন্তু সেগুলো চলচ্চিত্রের উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে না বলেই সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস। কারণ দিন শেষে সবাই শিল্পী। সবার একটাই লক্ষ্য— দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। প্রতিটি প্রার্থীই বলছেন সেকথা। আর এখানেই রয়েছে এফডিসির মানুষদের সান্ত্বনা এবং স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব কাদের হাতে উঠবে, তা জানা যাবে আগামীকাল ভোটের পর।