‘চাই না মাগো রাজা হতে রাজা হবার সাধ নাই মাগো দুবেলা যেন পাই মা খেতে’— কথাগুলো ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেনের (১৭২৩–১৭৭৫)। প্রকৃত অর্থে এটিই বাঙালির হাজার বছরের চিরন্তন স্বপ্ন। বাঙালির ভাতের কষ্ট, পেটের টানের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বাঙালি সারা জীবন দু’মুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছে। রাজা-বাদশা, উজির-নাজির, প্রচুর ধন সম্পদের মালিক বা ক্ষমতাবান হওয়ার স্বপ্ন ছিল খুবই কম। তাইতো বার বার অন্যের দ্বারা শোষিত হয়েছে। কেবল ভাত-ই পারে বাঙালিকে ‘ঠান্ডা’ করতে। আর বাঙালি দু’মুঠো ভাতেই খুশি।
বাংলায় কোনও সময় সম্পদের অভাব ছিল না। কিন্তু হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি দু’মুঠো ভাতের সংস্থান খুব কম সময়ই হয়েছে। রয়েছে অনেক শোক-গাঁথা ও কষ্টের গল্প। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির কতটুকু খাদ্যনিরাপত্তা ছিল, সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়। অনেকে মনে করতে পারেন, সুলতানি আমলে তো অবস্থা ভালই ছিল। আসলে সেই ইতিহাসে মূলত রাজা-বাদশা, উজির-নাজির ও সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের কথা ছিল। মোঘল-সুলতানি, সেন-পাল ও তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এদেশে উত্তর ভারত ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ এসেছে- আরব, ইরান ও মধ্য এশিয়া থেকে এসেছে, ইউরোপিয়ানরা এসেছে। মূলত তারা অধিকাংশই এসেছিল শাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের জন্য। তারা ছিল মূলত নগরকেন্দ্রিক। রাজধানী আর সেই সময়ের নগর ও ব্যবসাকেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হয়ে তারা বসবাস করত। অর্থ উপার্জন শেষে তারা আবার অধিকাংশ নিজেদের দেশে ফিরে যেত। শাসন ক্ষমতা, ব্যবসা-বাণিজ্য তারাই নিয়ন্ত্রণ করত। নিভৃত পল্লির স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী শাসনক্ষমতা, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অনেক দূরে ছিল, যে কারণে তাদের অবস্থা কোনও সময়ই ভাল ছিল না।
অনেক গবেষণা ও দলিল-দস্তাবেজ পর্যালোচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল ইটন, যিনি রিচার্ড এম ইটন নামে পরিচিত; ১৯৯৩ সালে ‘রাইজ অব ইসলাম অ্যান্ড দ্য বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার-১২০৪-১৭৬০’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি তার বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, মুসলিম শাসকরা প্রায় ৫০০ বছর বাংলা শাসন করলেও প্রথম ৪০০ বছরে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল খুবই অল্প। সেটা কোনওভাবেই ১০ শতাংশের বেশি ছিল না। মোঘলদের বাংলা জয়ের পর বিশেষ করে সম্রাট আকবরের (১৫৭৫ সালের পর) সময় থেকে মুসলিম জনসংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। তিনি তার বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই সময়ে দরিদ্র স্থানীয় অন্ত্যজশ্রেণির লোকেরা সংগঠিত কৃষি কাজের সাথে সংযুক্ত হতে যেয়ে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুসলমান হয়েছে। তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, পাললিক সমতলের, নিভৃত পল্লীর, জঙ্গলাকীর্ণ, জলমগ্ন নিম্নভূমিতে সুবিপুল অন্ত্যজশ্রেণির দরিদ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারা ছিল গরিবের গরিব, তাদের ছিল না খাদ্যনিরাপত্তা। তাদের অবস্থা সম্পর্কে কবি গুরু রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয় ‘সবার অধম দীনের হতে দীন, সবার পিছে, সবার নিচে’। এ থেকে ব্রিটিশ আমলের পূর্বে স্থানীয় বাঙালিদের অবস্থা কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে বাঙালিদের নিয়মিত ও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে হয়। ব্রিটিশ শাসনের সেরা সময় ধরা হয় ১৮৮১ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত। অথচ, এই সময়ে ভারতীয়দের অনাহারে ও অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিমাণ ছিল ১৬১ মিলিয়ন বা ১৬ কোটি ১০ লাখ! ১৭৭০ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মুছে যায়। অর্থাৎ, তিন কোটির মধ্যে এক কোটি মারা যায়। সময়টি বাংলা ১১৭৬ সাল হওয়ায় এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এই সময় কৃষক গরু ও বীজধান খেয়ে ফেলে, পুত্র-কন্যা বিক্রি করা শুরু করে। এক পর্যায়ে মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে থাকল। মাইলের পর মাইল ফসলের মাঠ ছিল, কিন্তু ছিল না ফসল, শূন্য খাঁ খাঁ। মানুষ প্রাণের তাগিদে ঘাস পাতা, মৃত পশু ও এমনকি, মৃত মানুষের মাংস খেয়েও ক্ষুধা নিবৃত্তি করেছিল। সিয়ার-উল-মুতাকখিরিন উল্লেখ করেছেন, কঙ্কালসার মৃতদেহ রাস্তাঘাটে পড়ে থাকত। মাংসভোজী পশু, পাখিদেরও মনুষ্য মাংসে অরুচি দেখা দেয়। শকুন গাছের মাথায় বসে থাকত, নিচে নামত না বা অন্যত্র চলে যাওয়া শুরু করল।
১৯৪৩ সালে বাংলাজুড়ে চলেছিল মহা-দুর্ভিক্ষ, যাকে বলা হয় পঞ্চাশের আকাল। ইতিহাসবিদদের ধারণা, মৃত্যুর সংখ্যা বিশ লাখের বেশি, কারও কারও মতে পঞ্চাশ লাখ ছাড়িয়েছিল। বাজারে কোথাও চাল ছিল না। খাবারের আশায় গ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে, শহরে বিশেষ করে, কলকাতায় চলে যায়। কলকাতার অলিগলি ভরে উঠে গ্রাম থেকে আসা লোকদের ‘একটু ফ্যান দেও গো না, মা’ শব্দে। গ্রাম থেকে যারা কলকাতায় এসেছিল, তারাই এই সময় বেশিরভাগ অনাহারে মারা যায়। আর গ্রামের মানুষ বেঁচেছিল শামুক, গুগলি, ঘাস ও বিভিন্ন গাছের পাতা আর কচু শাক খেয়ে। ভাতের বিকল্প হিসেবে মানুষ বজরা, বুনো আলু ও বিভিন্ন গাছের মূল ও গরু-ছাগলের ভুসি খাওয়া শুরু করে। তবে, কৃষিপ্রযুক্তির উন্নতি, ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও আর্থিক সচ্ছলতার কারণে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে অধিকাংশ বাঙালি খাদ্যাভাবের সমস্যা থেকে অনেকটা বের হতে শুরু করে। ঠিক এমন সময়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে অনেকের কাণ্ড দেখে অবাক হতে হয়! ব্লুমবার্গ, পানামা পেপারস ও প্যান্ডোরা পেপারস, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ন্যায় বিভিন্ন সংস্থা ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম যখন কিছুদিন পর পর বাঙালির অবৈধ ধনসম্পদ ও অর্থপাচারের রিপোর্ট বা খবর প্রকাশ করে, তখন অনেককে অবাক হতে হয়। মনে হয়, বাঙালির যেন ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’ দেখা দিয়েছে। তারা অঢেল ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। খুব দ্রুত সময়ে বিলনিয়ার বা পৃথিবীর অন্যতম একজন শীর্ষ ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। তাদের চাহিদার কোনও শেষ নেই। দুর্নীতি করে হোক আর কোন অপকর্ম করে, তারা মিশন চালিয়ে যাচ্ছে।
বেনজীর আহমেদ, যিনি বাংলাদেশ পুলিশের আইজি, র্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারের মত দায়িত্বশীল পদে কর্মরত ছিলেন। যিনি রাষ্ট্রের ‘শুদ্ধাচার পুরস্কারেও’ ভূষিত হয়েছিলেন। তার মত ব্যক্তি যখন এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকে, তখন অন্যদের নিয়ে আর কিছু বলার থাকে না। পৃথিবীর অনেক দেশে দুর্নীতি, লুটপাট ও অপকর্ম রয়েছে। কেউ হয়ত ২/১টি গাড়ি-বাড়ি বানায়, ২০/৫০ বিঘা জমি বানায়; টাকাপয়সা জমা রাখে, যেন নিজের ও সন্তানদের জীবন অনায়াসে চলে যায়। কোনও দেশ বা জাতির কষ্ট হলেও কোনও না কোনওভাবে এটা হয়ত মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু, কিছু বাঙালির অপকর্ম-দুর্নীতিকে একটা অস্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করেছে। আমাদের দেশে এটা পরিণত হয় কাণ্ড বা কেলেঙ্কারিতে। যেমন- বেনজীর কাণ্ড, আজিজ কাণ্ড, পি কে হালদার কাণ্ড, হলমার্ক কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। কিছুদিন পরপর যাদের নাম আসে, তাদের দেখা যায় হাজার বিঘার ওপরে ভূমি, দেশে-বিদেশে অসংখ্য ফ্ল্যাট, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট। দেশে-বিদেশের ব্যাংক ও কোম্পানিতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রভৃতি। তারা এমনভাবে অর্থ কুক্ষিগত করে, যেন চৌদ্দ পুরুষ ভোগ করে শেষ করতে না পারে। আমাদের দেশে দুর্নীতি, অপকর্ম ও অর্থপাচার ঠেকাতে দুদকসহ বেশকিছু সংস্থাও রয়েছে। সেগুলো স্বাধীন বা পরাধীন কি না, সে প্রশ্নের আগে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে, এত পরিমাণ অবৈধ সম্পদ, কারসাজি ও অপকর্ম তদন্ত ও নিয়ন্ত্রণ করার জনবল ও সক্ষমতা সংস্থাগুলোর আছে কি না।
বিষয়গুলো শুধু ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতি ও অপকর্ম হিসেবে না দেখে, এটাকে বর্তমান সময়ের এক ধরনের উন্মাদনাও বলা যেতে পারে। বাঙালির মধ্যে সব সময় কোনও না কোনও উন্মাদনা কাজ করে। নিজে কী, নিজের পরিচয় কী হওয়া উচিত, নিজের জন্য ভাল— এমন চিন্তা বাঙালি কমই করেছে। এক সময় বাঙালিরা নিজেদের বহিরাগত প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। হিন্দু সমাজব্যবস্থায় এমনটা লক্ষণীয় ছিল, যারা উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ অর্থাৎ যারা কনৌজ-মিথিলা বা উত্তর ভারত থেকে এসেছে, তারাই সমাজে বেশি সম্মানিত। অন্যদিকে, মুসলিম সমাজব্যবস্থায় দেখা যায়, এক সময় নিজেদের ইরান-তুরান–আরব-বাগদাদের পীর-ফকির, রাজাবর্গ ও তাদের অনুচর ও সিপাহীদের বংশধর প্রমাণে মহাব্যস্ত ছিল। আশা করা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের পর বাঙালি ছাড়া অন্য কিছু ভাবার প্রবণতা শেষ হবে এবং বাঙালি নিজের উন্নয়ন ও মঙ্গলের কথা চিন্তা করবে, কিন্তু সেটা হয়নি। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের চরিত্রে পরিবর্তন আসেনি। বাঙালির মধ্যে এখন উন্মাদনা কাজ করছে, কীভাবে দ্রুত সময়ে অঢেল ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার মালিক হওয়া যায়। কীভাবে বিল গেটস, টাটা, বিড়লা, আদানির মত ধনী হওয়া যায়। যেন টাকাই সব কিছুর মানদণ্ড। কিন্তু, কেউ যদি পরিশ্রম করে ও সৎভাবে ধনী হয়, তাহলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে, উনাদের অপকর্মগুলো কোটি কোটি বাঙালির ‘ভাত মেরে ধনী’ হতে চাওয়াটাই এখন সবার দুশ্চিন্তার বিষয়। বর্তমান সময়ে আর এক ধরনের উন্মাদনা হচ্ছে, বাঙালিরা এখন মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ পশ্চিমা দেশে বা অন্য কোনও দেশে বসবাস করা বা আসা-যাওয়া অনেক সম্মানের ও আভিজাত্যের ব্যাপার। যাদের ঐসব দেশের নাগরিকত্ব, সার্টিফিকেট ও ব্যবসা আছে, তারা সমাজে অনেক সম্মানিত। এখন যেন একটা হিড়িক পড়ে গেছে, কীভাবে ঐসব দেশে স্থায়ী হওয়া যায়। তাই দুর্নীতি করে হোক, কোনও অপকর্ম করে হোক বা অন্য কোনও উপায়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন হলে পৈতৃক জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করে। দুর্নীতিবাজ ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা যেমন টাকা নিয়ে যাচ্ছে; আবার যারা দুর্নীতির শিকার, সাধারণ মানুষ তারাও আর এদেশে থাকতে চায় না। বাংলাদেশ যেন সম্পদ হারানোর একটা চক্র বা সিস্টেমে পড়ে গেছে। বিষয়টি এমন, ইংরেজরা এক সময় জাহাজ ভর্তি করে এদেশ থেকে ধনসম্পদ নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে পাকিস্তানিরাও। আর এখন আমরা নিজেরাই বহন করে বিভিন্ন দেশে দিয়ে আসছি, যাকে বলা হয় ‘Self colonization’ অর্থাৎ নিজেরাই দাসে পরিণত হওয়া। অর্থনীতিবিদদের মতে, যারা অবৈধ অর্থ আয় করে বা দুর্নীতি করে অল্প সময়ে অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়, তারা এক সময় বিভিন্ন কৌশলে তাদের অর্থ-সম্পদের বড় একটা অংশ পাচার করে দেয়। তারা এমন সব দেশে টাকা নিয়ে যায় যেখানে টাকার উৎস জানতে চাওয়া হয় না। বৈশ্বিক নানা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ অন্তত ১০টি দেশে। বারবুডা, কেম্যান আইল্যান্ডের মতো অফশোর বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত দ্বীপদেশগুলোয়ও বাংলাদেশিদের। কানাডায় গড়ে উঠেছে বেগমপাড়ার মত অভিজাত এলাকা যেখানে বাঙালিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা তাদের স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের ঐসব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, মাঝেমধ্যে নিজেরা যেয়ে বিলাসী জীবনযাপন করে। এসব ব্যক্তিদের আয়ের উৎস বাংলাদেশ। ইংরেজ আমলে ভারতকে বলা হত ‘ড্রেইন অফ ওয়েলথ’। অর্থাৎ, ভারত থেকে শুধু সম্পদ যেত, কিছুই ফিরে আসত না। আর বর্তমান সময়ে বাংলাদেশকে অনেকে বলে থাকে ‘ড্রেইন অফ ইলিগ্যাল ওয়েলথ’।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অতিদ্রুত অকল্পনীয় বিত্তবৈভব অর্জন করা বা সেগুলো নিয়ে বিদেশে সেটেল্ড হওয়ার উন্মাদনা থেকে বাঙালিদের সরে আসতে হবে। অর্থের প্রয়োজন আছে, তাই বলে অবৈধ পথে নয়। অল্পতে তুষ্ট থেকেও কল্যাণ ও সুখী-জীবন পাওয়া যায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও মাত্রাতিরিক্ত লোভ কোনওদিন সুখ আনতে পারে না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা বা কোটি কোটি বাঙালি তো কোন সময় দু’মুঠো ভাতের বেশি প্রত্যাশা করেনি। তাহলে আমরা কেন ‘গরীবের ঘোড়া রোগে’ আক্রান্ত হব? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘কলস যত বড়ই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোনও কাজ পাওয়া যায় না। তখন যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়।’ তেমনি বলা যায়, কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর অপকর্ম অনেক সময় অনেক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, সরকার ও সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দুর্নীতি, অপকর্ম ও অর্থপাচার ঠেকাতে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রয়োজনে সংস্থাগুলোর জনবল ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরাক্রমশালী দুর্নীতিপরায়ণ গোষ্ঠীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। লেখক: গণমাধ্যমকর্মী