গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিলাম। শহর ততক্ষণে মিছিলে মিছিলে একাকার। তরুণ-যুবক, নারী, বৃদ্ধ এমনকি অনেক শিশুও সেই মিছিলে সামিল হয়েছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ রাস্তায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দেখছেন সাধারণ মানুষ। তারাও এই মিছিলের একজন মনে করছেন নিজেকে।
জানিয়ে রাখি, ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) পতন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের। এদিন পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। দেশের গণমাধ্যমও এ নিয়ে সরব থাকে।
এদিকে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে চাপ উপেক্ষা করে ‘সংযম’ দেখানোয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৫ আগস্ট) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি বলেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যে কোনো পরিবর্তন পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই, বাংলাদেশের জনগণই ভবিষ্যৎ সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক।
দুই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন। দেশের বিশিষ্টজনেরাও দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানিয়েছেন, ‘সংসদ ভেঙে দিয়ে অতি দ্রুত একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে।’ শুধু তাই নয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার (৫ আগস্ট) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যে কোনো পরিবর্তন পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক প্রাণ ঝরেছে। আমরা সামনের দিনগুলোতে শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানাচ্ছি।’ [সূত্র: রাইজিংবিডি, ৬ আগস্ট ২০২৪]
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে সংসদে অন্য কোনো ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাবেন, তাহলে সংসদ ভেঙে না দিয়ে অনুরূপ ব্যক্তিকে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ পড়াতে পারেন। সংবিধানের এই বিধানের আলোকে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মোটামুটি নিরপেক্ষ, সৎ ও দেশের জাতীয় কল্যাণের চিন্তা যাঁর মাথায় প্রধান এবং নিজের ক্ষমতা, স্বার্থ ও লোভলালসা যাঁর কম, সেরকম একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নিয়োগ করতে পারেন।’ [প্রথম আলো, ৬ আগস্ট ২০২৪]
তিন ইতোমধ্যেই আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। সব পক্ষেরই এখন থামা উচিত। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে জনগণকে শান্ত থাকার, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ গোলযোগ থেকে বিরত থাকার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা এখন সবারই মেনে চলা উচিত। তাই মাননীয় রাষ্ট্রপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি, দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দিন। দেশে শান্তি ফিরে আসুক। মনে রাখবেন এই দেশটা আপনার, আমার, সবার।
লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক