মতামত

নিষিদ্ধ নজরুল

সমাজের যে আধিপত্যবাদী ও শোষণ মনস্ক শ্রেনিচরিত্র তা পরিবর্তনের ক্ষীণধারা সাম্যবাদী চিন্তক মানুষের মধ্যে জাগরুক থাকে এবং কখনো তা বিপ্লবে রূপান্তর হয়। সমাজকে সাম্যের মেলবন্ধনে গড়ার প্রাগ্রসর মানুষের বাসনা সাধারণ মানুষকে দোলা দেয়। সমাজের কর্তারা কুশিলবের আসনে বসে বহমান ধারাবাহিকতায় সুযোগ গ্রহণ করে ঐতিহাসিক পরম্পরায় শোষণ করে এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ফন্দি-ফিকির করে। তারা এই কার্যক্রমে কোনো ছেদ চান না এবং কোনো প্রতিবন্ধকতার আঁচ পেলেই সমূলে রদ করেন। 

তবে কিছু মানুষ তো সব সমাজেই গহীনের কথা বলে, সমতার কথা বলে, সাম্যের কথা বলে- যা মানুষের সহজাত। এসব বিষয় যাঁরা ধাতস্থ করে ব্যক্তি জীবনের সুখ-সুবিধা বিলীন করে জনতার কাতারে দাঁড়াতে পারেন শিরদাঁড়া সোজা করে তাঁরা অনেক সময় সমাজে সাম্যের পক্ষে পরিবর্তন আনতে পারেন কিংবা পরিবর্তনের বার্তা দিতে পারেন। এদের কেউ লেখার মাধ্যমে মানুষকে সাংগঠনিকভাবে একত্র করে বিপ্লবের মাধ্যমে কিংবা অন্য মাধ্যমে বিপ্লবের বীজ রোপণ করেন মানুষের মনোভুবনে। ইতিহাসের বাঁক বদলে এ রকমটাই সাক্ষ্য দেয়।

ভারতীয় সমাজে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিপ্লব ছিল অতীত কাল থেকে। শোকে, তাপে, অনলে চলছে স্ব-শাসনের আন্দোলন। ১৯৪৭-এর দেশভাগ পর্বে স্ব-শাসনের আন্দোলন ছিল ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনের রকম ছিল হরেক, তবে দূরদৃষ্টি দিয়ে যাঁরা বুঝেছিলেন স্বাধীনতার জন্য রক্ত উৎসর্গ জরুরি তারাই সশস্ত্র সংগ্রামে উদীপ্ত ছিলেন। সমন্বয়ী, আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতায় তাদের বিশ্বাস ছিল না। বিপ্লবী ধারায় স্বাধীনতাকামীদের অগ্রনায়ক কবি নজরুল ইসলাম। নজরুল বিশ্বাস করতেন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা না এলে তা সন্মানের হবে না এবং দীর্ঘমেয়াদী সুফল আনবে না। এ জন্য সেই পথেই হেঁটেছেন। ফলাফল অনিবার্যভাবে তাঁর উপর শাসকদের খড়্গ।  

নজরুলের জীবনে শুধু শাসক ইংরেজ, তাদের তাবেদার দেশীয় দোসরদের পক্ষ থেকেও কম বাণ বর্ষণ হয়নি। দেশনাশ থেকে সৃজনকর্ম নাশের সর্বব্যাপী উদ্যোগ ছিল। নজরুলের সৃজন কর্মের উপর বহুরৈখিক নিপীড়ন, বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করণের বিষয় দৃষ্ট হয়।  নজরুল যতদিন সবাক ছিলেন তাঁর লেখা শাসকদের তটস্থ করে রাখতো। উপনিবেশ শাসকের একটা রীতিশুদ্ধ বিষয় ছিল, যে কোনো ধরনের শাসকদের বিরুদ্ধাচারণকে দমন করে রাখা। এজন্য তাদের সজাগ দৃষ্টি ছিল। নজরুল চিরদ্রোহী। ভারতের স্বাধীনতার বিশেষত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতার তেজবাক্য এতটা প্রবলভাবে নজরুলের আগে কেউ বলেনি বোধকরি। বালক বয়সে লোটো দলের গানে নজরুল প্রতিভার খানিক স্বাক্ষর পেলেও তা প্রতিভাত হয় ১৯১৭ এ করাচীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য গঠিত ‘উনপঞ্চশ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টে’। বৃটিশদের পক্ষে যুদ্ধ অংশ নিতে গেলেও তার মননে ছিল সাম্যবাদী ও সমাজতান্ত্রিক চেতনা। তাই তার সৈনিক ব্যারাকের লেখায় দেখা মেলে গল্পের নায়ক লালফৌজ অথাৎ রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সৈন্য-দলে যোগ দিতে গিয়েছেন। 

নজরুল সৈনিক ব্যারাক হতে ১৯২০ সালে কলকাতা ফিরে আসেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোনো এক বৃষ্টিস্নাত রাতে নজরুল রচনা করেন তাঁর কালোত্তীর্ণ কবিতা “বিদ্রোহী”। বিদ্রোহীতে নজরুল লিখেন : আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!  আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন।  আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!  আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাত্রীর!

বিদ্রোহী রচনার পর তরুণদের মাঝে যেন বারুদমাখা চেতনা জাগরুক হলো স্বাধীনতার পক্ষে। অপরদিকে শাসকদের পক্ষ থেকে নেমে এলো নানা খড়্গ। কারণ সমাজের উৎপীড়নে এমন শপথ আর কারো মুখে শোনা যায়নি। তরুণদের মুখে একই মন্ত্র “আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কুর্নিশ” কোনো বাঙালি কবি শক্রপক্ষকে এমন আহ্বান আগে জানাননি। 

বিদ্রোহীর উপর চূডান্ত অর্থে নিষিদ্ধ বা বাজেয়াপ্তের বাণ অর্পিত না হলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রচারে পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। শাসকশ্রেণী জনগণের প্রলয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে  পড়ে যায়। কিছুটা সময় অবস্থা পর্যবেক্ষণে ক্ষেপণ করে। নজরুলের সৃজনে কীভাবে রাশ টানা যায় সে বিষয়ে জাল বুনতে থাকে। বিদ্রোহী প্রকাশের এক বছর না পেরুতেই নজরুলের “যুগবানী” বইটি নিষিদ্ধ হয় ১৯২২ সালে। 

ব্রিটিশ ভারতে ইংরেজ শাসকরা নজরুলের ৬টি বই বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করে এবং বাকীগুলো এ উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেও শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়াও কবি কর্তৃক প্রকাশিত ও সম্পাদিত ২টি পত্রিকা যথাক্রমে ‘দৈনিক নবযুগ’ (১৯২০-২১) ও ‘অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতু’র (১৯২২) প্রায় অধিকাংশ সংখ্যা সম্পর্কেই রাজদ্রোহ সঞ্চারের অভিযোগে সতর্কবাণী উচ্চারণপূর্বক চূড়ান্তভাবে ‘নবযুগে’র জামানত বাজেয়াপ্ত ও ‘ধূমকেতু’ বন্ধ করে কবিকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। 

ইংরেজ শাসকরা কেবল নজরুল ইসলামের নয়, তাঁর কালে এবং আগে-পরে আরো বহু লেখকের বই-পুস্তিকা-গান ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে লেখককে করেছে কারারুদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে গ্রন্থের প্রকাশক ও ছাপাখানার মালিককেও দণ্ডিত করেছে। নজরুল ইসলাম এবং তাঁর প্রকাশক ও মুদ্রকগণও এই পরিস্থিতির শিকার হন।

নজরুলের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫৭। এর মধ্যে ৭টি কাব্য, ৩টি প্রবন্ধ, ১টি উপন্যাস ও ১টি সঙ্গীত গ্রন্থসহ মোট ১২টি গ্রন্থ রাজরোষ কবলিত হলেও সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা চূড়ান্তভাবে ৬টি গ্রন্থকে বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করে এবং অপর ৬টি গ্রন্থকে এ উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেও শেষ পর্যন্ত নিবৃত্ত হয়।

১৯৩০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কাব্য সঙ্কলন ‘সঞ্চিতা’ও বাজেয়াপ্তির জন্য তালিকাভূক্ত করা হয়েছিল। আর ১৭ সেপ্টেম্বর সরকার বাজেয়াপ্ত করে কাব্যগ্রন্থ ‘প্রলয় শিখা’। উপন্যাস ‘কুহেলিকা’ বাজেয়াপ্তির জন্য তালিকাভুক্ত হয় ১৯৩১ সালে। সর্বশেষ সঙ্গীতগ্রন্থ ‘চন্দ্রবিন্দু’ নিষিদ্ধ হয় একই বছর ১৪ অক্টোবর। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, সরকারি গোয়েন্দা ও পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে এক পর্যায়ে কবির বই প্রকাশকাল বিহীন অবস্থায় মুদ্রিত হয়ে বাজারে আসতে থাকে। এ ধরণের দু’টি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ও ‘রুদ্রমঙ্গল’। কিন্তু এই প্রয়াস খুব একটা কাজ দেয়নি। কেননা, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সরকার তৎপর হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সরকারি গোয়েন্দারা নজরুল ইসলামের ওপর সবসময় নজর রাখতো। তাঁর সকল কাজের নজরদারি করে তাদের দৃষ্টিতে ‘আপত্তিকর’ বিষয়গুলোকেই নানা সুপারিশ করে ওপর মহলে পাঠানো হতো সিদ্ধান্তের জন্য।

‘যুগবাণী’ ও ‘অগ্নিবীণা’র বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেয়ার পর প্রকাশকদের দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও অনিহা অকুতোভয় কবির কাছে কোনো সমস্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়নি। প্রকাশকদের দুর্বল স্থানেও তিনি আঘাত করেননি। তাদের সরকারি ও পুলিশী হয়রানীর ঝামেলা থেকে আড়াল করতে নিজেই গ্রন্থের প্রকাশক হয়েছেন। তাঁর কোনো ভয় ছিল না। না জেলে যাওয়ার, না পুলিশী ঝামেলার। কারণে শোষণ নির্যাতনের সব কিছু দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়াই ছিল তাঁর স্বভাব।

চল্লিশ দশকের শেষ দিকে নজরুলের নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত বইগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কাউন্সিল সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির আইন সভায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনকে নোটিশ প্রদান করলে আইন সভার ১০ মার্চ ১৯৩৯ এর অধিবেশনে জানানো হয় যে, ‘সরকার যুগবাণী, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা, চন্দ্রবিন্দু ইত্যাদি গ্রন্থকে দেশদ্রোহাত্মক বলে বিবেচনা করেন। ঐ বাজেয়াপ্তির আদেশ প্রত্যাহারের কথা সরকার ভাবছেন না। কারণ শক্তিশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠী দেশে গণ-বিদ্রোহ ও সামাজিক বিপ্লব সংগঠনের ইচ্ছা এবং সাংবিধানিক উপায়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের পথ পরিহারের কথা ঘোষণা করেছেন।’ [নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ বই, ড. আবুল আজাদ, গ্লোব লাইব্রেরী, ২০০৩ পৃ ২০]

এই ঘটনার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই কবি আবদুল কাদিরসহ বেশ কয়েকজন সাহিত্যিক নজরুলের গ্রন্থসমূহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেন- ‘নজরুল ইসলাম আধুনিক বাংলায় মুসলিম জাগরণের প্রথম হুঙ্কার, তাই তাঁহার রচনাবলী পাঠের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হওয়া দেশবাসীর পক্ষে নিতান্তই দুঃখজনক। এই দুঃখের প্রতিকার আমরা আজ দৃঢ়তার সঙ্গে দাবী করি। অন্যান্য প্রদেশের কংগ্রেসী মন্ত্রীসভা যদি অনুরূপ দাবী পূরণ করিতে সমর্থ হইয়া থাকেন, তবে বাংলার হক মন্ত্রীসভার তাহা পূরণ না করিবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণই থাকিতে পারে না।’

কাজী নজরুল ইসলাম শাসকদের জন্য সব সময়ই ছিল বারুদ। এ জন্য নজরুলের লেখাকে বিচার বিবেচনা ছাড়াই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা এমনকি নিষেধাজ্ঞা দিতে পিছপা হয়নি। এ জন্য নজরুলের কোনো প্রকাশনা হলেই পিছু নিতো শাসকদের লোকজন। 

‘সর্বহারা’ প্রকাশের পরপরই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা রিপোর্টে এর কবিতাগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় ‘Almost all the poems breathe a spirit of revolt.’ পাবলিক প্রসিকিউটর রায় বাহাদুর তারকনাথ সাধুও ২২ ডিসেম্বর ১৯২৬ তারিখে ‘সর্বহারা’ বাজেয়াপ্তির জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি সেক্রেটারিকে চিঠি দেন। ‘কৃষাণের গান,’ ‘ধীবরদের গান’, ‘রাজাপ্রজা’ ও ‘ফরিয়াদ’ কবিতা চতুষ্টয়ের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে চিঠিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ও ১৫৩এ ধারায় কবিকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট লেখা হয়।

নজরুলের বিপ্লবী চেতনার লেখালেখিকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু শুধু পছন্দই করতেন না, সমর্থনও করতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা। কবি নজরুল যে স্বপ্ন দেখেছেন সেটা শুধু তাঁর নিজের স্বপ্ন নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির স্বপ্ন। বাস্তবিক, বাঙালির পরাধীনতা ও দুরবস্থা ঘোঁচাতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন কবি। যে অখণ্ড ভারতে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি, সেখানেও কিন্তু বাঙালির জাতিসত্তা সম্পর্কে আপোষ করেননি। ১৯৪০-৪২ সালের দিকে হিন্দুস্তান-পাকিস্তান সৃষ্টির চূড়ান্ত রূপ ধারণ করার প্রেক্ষাপটে আরেকবার গর্জে উঠেছিলেন নজরুল। মুসলমানদের কথিত আবাসভূমি আন্দোলনের ‘পাকিস্তান’কে ‘ফাঁকিস্তান’ অভিধা দিয়েছিলেন। বাঙালিকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় ডাক দিয়ে ঘোষাণা করেছিলেন ‘বাংলা বাঙালি’র।

একনজরে ব্রিটিশ রাজদণ্ডের হাতে নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ গ্রন্থের পরিসংখ্যান : কাব্যগ্রন্থ : বিষের বাঁশি (১৯২৪), ভাঙার গান (১৯২৪), প্রলয় শিখা (১৯৩১), সঙ্গীতগ্রন্থ : চন্দ্রবিন্দু (১৯৩১), প্রবন্ধগ্রন্থ : যুগবাণী (১৯২২), দুর্দিনের যাত্রী (১৯২৬)।

বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ হয়নি, কিন্তু এ উদ্দেশ্যে তালিকায় নাম উঠানো হয়েছিলো এবং সরকারি দফতরে বহু লেখালেখি হয়েছে, কবির এ ধরনের অপর ৬টি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : কাব্যগ্রন্থ : অগ্নিবীণা (১৯২২),  সর্বহারা (১৯২৬), ফণি-মনসা (১৯২৭), সঞ্চিতা (১৯৩০), প্রবন্ধগ্রন্থ : রুদ্রমঙ্গল (১৯২৭), উপন্যাস : কুহেলিকা (১৯৩১)। [নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ বই, ড. আবুল আজাদ, গ্লোব লাইব্রেরী, ২০০৩ পৃ ৮]

নজরুলের জীবন ছিল একেবারেই ছন্নছাড়া। কিন্তু নজরুল কখনো তাঁর সরবকালে বাঙালির মুক্তির জন্য লেখা ও কর্মে নিজেকে দূরে রাখেননি। এ জন্য জেল-জুলুম, হুলিয়া, লেখা বাজেয়াপ্ত করে নজরুলকে নাকাল করার প্রচেষ্টা ছিল। নজরুল চিরদ্রোহী। এ কারণেই নজরুল প্রাসঙ্গিক সমকালে ও মহাকালে।

লেখক: প্রাবন্ধিক