মতামত

ষোলই ডিসেম্বরের ভাবনা: ২০২৪

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রারম্ভ ১৯৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর। তাই, ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের ছিল বহু মাত্রা এবং যুদ্ধের বাইরেও এ দেশের রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যা বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল মনে রেখেছে। 

বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় বুঝতে পেরেই এ দেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এর ফলে যে বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতা তৈরি হয়, তার অতল ক্ষতির অনুভব মুক্তিকামী মানুষের অন্তর থেকে বিলীন হবার নয়। অথচ, সেই ইতিহাস ভুলে যাবার এক ধরনের প্রবণতা বিবিধ প্রক্রিয়ায় প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের জুলুম থেকে মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম করেছিল একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায়। কিন্তু, নতুন রাষ্ট্রের প্রারম্ভেই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নের সুরাহা যেমন হয়নি, তেমনই গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের এক উদ্ভট মিশেলের স্পষ্ট ব্যাখ্যাও এই জাতি আজও পায়নি, হয়নি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নেরও মীমাংসা। অনুমান হয়, এসব জটিলতা সৃষ্টি করা ও জিইয়ে রাখা হয়েছিল বাংলাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিচয়ের বাসিন্দাদের চির-বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করে রাখার সুচতুর উদ্দেশ্যে। 

এমনকি, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজেও মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে নিয়ে মানুষের অনুভূতিগত রূপান্তর চোখে পড়ার মতো। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ডিসেম্বর মাস জুড়ে আয়োজন করত ‘বিজয়ের উৎসব’। প্রত্যাশিত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবার তারা এ উৎসবের নাম দিয়েছে ‘ডিসেম্বরের উৎসব’। কারণ, হিসেবে তারা বলার চেষ্টা করছেন যে, ‘বিজয়ের মাস’ কথাটা আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতির পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল, তা থেকে এই উৎসবকে মুক্তি দিতে চাইছেন তারা। নিজেদের এই পরিবর্তনকামিতা জায়েজ করতে কর্তৃপক্ষ টেনে নিয়ে এসেছেন নবী ও ধর্মগুরুদের পর্যন্ত। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ জানিয়েছেন যে, তারা তর্ক-বিতর্কের মধ্যে জীবন্ত থাকতে চান। “আমি বিতর্কের মাঝে থাকতে পছন্দ করি। যে মানুষটা বিতর্কের মাঝে নেই, সে প্রচলিত গৎবাঁধা পথে চলে। নবীজীর কথা দেখবেন, তিনি যখন নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন, তখন তিনি বিতর্কিত হয়েছিলেন। শ্রী চৈতন্য একইভাবে বিতর্কিত হয়েছিলেন। বাধা এসেছিল, পক্ষে-বিপক্ষে শক্তি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।” এর থেকে বোঝা যায়, দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তিনি শিল্পকলার অবতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইছেন। যেখানে ইসলামের নবী ধর্মচ্যুত বিশৃঙ্খল, পরস্পর বিদ্বেষী মানুষকে ধ্বংসের পথ থেকে সরিয়ে কল্যাণের পথে আনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন; যেখানে চৈতন্যদেব ভেদবাদী সমাজে অভেদের চৈতন্য প্রতিষ্ঠার প্রেমময় পথ প্রদর্শন করে গেছেন; সেখানে জামিল সাহেব নিজেকে নবী-অবতারের স্থানে বসিয়ে ‘বিজয়’কে প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন ‘ডিসেম্বর’ দ্বারা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেছে অবলীলায়। এভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, প্রাণ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনার ইতিহাসকে দ্রুতই মুছে ফেলতে চাইছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে থাকা গণপ্রতিষ্ঠানগুলো। 

তারা খুব ভালো করেই জানে, মুক্তিযুদ্ধের একক অধিপতি হয়ে ওঠার ঘৃণ্য মানসে তাজউদ্দীন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব এবং সর্বসাধারণের জীবন বাজি রাখার অবদানকে অস্বীকার করা একচোখা ইতিহাস প্রচার করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল হয়েও আওয়ামী লীগ পরিত্যাক্ত হলো। বলা চলে, ঠিক একইভাবে, কেবল আওয়ামী ন্যারেটিভের বিপরীতে দাাঁড়াতে হবে বলেই ‘বিজয়’ শব্দটি মুছে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সর্বসাধারণের বিজয়কে অস্বীকার করার যে হীন মানসিকতা প্রদর্শন করা হলো, তা ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানকে অবমূল্যায়ন করার ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা নিশ্চয় অবিবেচনাপ্রসূত হবে না। ‘বিজয়ের উৎসব’কে ‘ডিসেম্বরের উৎসব’ করে তোলার পেছনে যে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে অনানুষ্ঠানিকভাবে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবসকে অবমূল্যায়ন করার জন্য কাউকে কি জবাবদিহিতার মধ্যে আনার তৎপরতা আজকের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবা বুদ্ধিজীবী সমাজ অথবা সাধারণ জনগণের কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিচ্ছিন্ন মন্তব্য ব্যতীত তেমন কিছু চোখে পড়েনি। এ ধরনের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে ওঠা দিবসগুলোকে অবিতর্কিত রাখার প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ না থাকা অশুভ লক্ষণই বটে। ‘বিজয়ের উৎসব’কে অযৌক্তিক রূপান্তরের দাবি কি ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে উঠেছে, নাকি এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ! যদি তেমন কিছু হয়, তা স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। যদি তা না হয়, তাহলে জামিল সাহেবের একক সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায় কীভাবে, তা জানার অধিকারও জনগণের আছে। নাকি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ করেছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে যাবার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি! 

অবশ্যই এটি সুখের চিত্র যে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য এ পর্যন্ত কাউকে বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তাহলে, মানুষ নীরবতা পালনের ভূমিকায় অবতীর্ণ কেন হলো, সে প্রশ্ন নিজের কাছেই তোলা যায়। অন্তত সরকার নিজেই পারে নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সংস্কৃতি বিকাশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। তেমনটা আচরণই প্রত্যাশিত ছিল উপদেষ্টাগণ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের কাছে। 

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ন্যারেটিভকে উল্টে দেওয়ার উদ্যোগ কাজের কথা মোটেই নয়। অন্তবর্তীকালীন সরকার কি এই জানার সুযোগ নিচ্ছে যে, আমাদের বৃহত্তর সমাজ এমন এক অবস্থানে এসে পৌঁছেছে, যেখানে কারো মনে কোনো প্রশ্ন নেই! প্রশ্নহীন সমাজ এঁদো ডোবার তুল্য। এঁদো ডোবায় ঢেউ বা তরঙ্গ থাকে না। হয়ত কিছু কচুরিপানা জমে উঠতে পারে সেখানে বড়জোর। এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিমতো নিতে পারে। যে দেশ ও জাতির ভিত্তি ভাষা ও সংস্কৃতি, ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতিতত্ত্বের কূপমণ্ডুকতা ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম; মাত্র অর্ধশতকেই সে দেশে কেমন করে এমন বদ্ধ, নিস্তরঙ্গ, প্রশ্নহীন সমাজের বিকাশ ঘটল, তার অনুসন্ধান ছাড়া সাম্য, ঐক্যের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এক অসম্ভব কাজ হবে। 

বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তরে রাজনীতির সঙ্গে সমাজ ও সংস্কৃতির শক্ত মেলবন্ধন ছিল। এখন রাজনীতিই হয়ে উঠেছে সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচালক, নিয়ন্ত্রক। নিশ্চয়ই এক দিনে হয়নি। সামাজিক রূপান্তর এক দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। বছরের পর বছরের কাঠামোগত প্রক্রিয়ায় সামাজিক রূপান্তর প্রভাবিত হয়। এ কাজটি সবচেয়ে জঘণ্যভাবে করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ শিক্ষার মধ্যে দিয়ে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। তারা এতটাই দানবীয় হয়ে উঠেছিল যে, কারো বিরোধিতা, সমালোচনা, প্রতিবাদ সহ্য করেনি। ধমক দিয়ে, খুন করে, গুম করে, গ্রেপ্তার করে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। সমষ্টির শক্তির কথা তারা বিস্মৃত হয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম তো বটেই, সর্বসাধারণ চরম বিরক্ত হয়েছিল। সে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশকে দুঃশাসনমুক্ত করেছে। আজ যখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গান ওভারনাইট মুছে দিতে চাইছি, তখন প্রশ্ন জাগে, এই গানগুলোও কি আওয়ামী লীগের সম্পত্তি ছিল! আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুলে যেতে চাইছি যে, জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক অবস্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। এ কথা ঠিক, এ দেশের নাগরিক হিসেবে যে কারোরই যেকোনো অবস্থান গ্রহণ করে রাজনীতি করার হক রয়েছে। তাই বলে কি মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে, বিজয় দিবসের প্রশ্নে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐতিহাসিক ভূমিকার সত্যতা উল্টেপাল্টে ফেলার মতো আচরণকে হক হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে! এই জনমনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের পেছনে বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসকে আওয়ামীকরণের জঘন্য প্রক্রিয়াকে নিশ্চয় দায়ী করা যায়। তাদের একচোখা হীন প্রক্রিয়া জনমানসে এমন অস্বস্তি তৈরি করেছে, যা হয়ত আওয়ামী দুঃশাসনমুক্ত সমাজেও আজ আর নেওয়া যাচ্ছে না। যখন সামষ্টিক চেতনাকে কেবলই একটি দলের এবং এক ব্যক্তির কীর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, তখন জনসাধারণ সেই বাড়াবাড়িকে গ্রহণ করেনি। সে বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে জনতা জীবন হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করেছে ও সফল হয়েছে। সমাজমানসের এই পরম প্রতিক্রিয়াকে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চার কাজে না লাগিয়ে আমরা লাগাচ্ছি আওয়ামী লীগের হঠকারিতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের কাজে। আর তা করতে গিয়ে একাত্তরের বিজয়কেই কলঙ্কিত করছি। এমনকি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি প্রণীত গ্রন্থ আলোচনার আয়োজন করে বর্তমান সময়ের বুদ্ধিজীবীরাও একাত্তরের নির্মম স্মৃতিকে ভুলে থাকার পরিহাসমূলক অভিনয়ে লিপ্ত হয়েছি। মনে রাখতে হবে, অন্যায়-অত্যাচারের বিচারিক প্রতিকার আর প্রতিশোধ এক জিনিস নয়। বিষয়টিকে কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ ‘ক্ষমতার বাড়াবাড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশেষ দিবসের প্রসঙ্গকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা শেখ হাসিনার আমলে দেখতে দেখতে মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। বাড়াবাড়ি একাধিক জায়গাতেই হচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না পাঠ্যবইও। পাঠ্যবইয়ের ত্রুটি দূর করার বদলে করে তোলা হচ্ছে ইনটেনশনালি ত্রুটিপূর্ণ। জাতীয় সংগীতকেও করে তোলা হচ্ছে বিতর্কিত। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনরকম জানান না দিয়ে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে জনবিচ্ছিন্ন করে তোলার। ইতিহাস সাক্ষী, এই ভূখণ্ডের মানুষ বাড়াবাড়ি মেনে নেয় না। প্রথমে নীরব থাকে ঠিকই, তারপর দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, রুখে দাঁড়ায়। এ দেশের মানুষ ছাড় দেয়, ছাড় দেয়, ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। সময়ের প্রয়োজনে জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ে নামে। জুলাই অভ্যুত্থানের উজ্জ্বল ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিকে মানুষ ১৫ বছর ছাড় দিয়েছে, তারপর কিন্তু আর ছেড়ে দেয়নি। উপড়ে ফেলেছে। মানুষ জেনেছে মানুষের ভেতরের শক্তিকে। এ কথা মাথায় রেখেই নতুন বাংলাদেশ গঠনে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সতর্ককতার সাথে কাজ করতে হবে। যে সংস্কারের প্রত্যাশায় ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করেছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, সে প্রত্যাশা পূরণ না হবার ক্ষোভ জনমনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ শুরু হবার আগেই আমাদের সব মহলের সতর্ক ভূমিকা আবশ্যক। জুলাই অভ্যুত্থানের সাফল্যকে ধরে রাখতে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়বদ্ধতার প্রকাশ। শেখ হাসিনা যা করেছেন, সেই একই স্বেচ্ছাচারী আচরণের পুনরাবৃত্তি না করে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত বাংলাদেশ রচনায় মনোযোগী হওয়াই কল্যাণের একমাত্র পথ।

 

লেখক: গল্পকার ও ফোকলোর গবেষক।