দেশব্যাপী আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে অনিবন্ধিত দল জামায়াতে ইসলামীকে মাঠে নামিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর নিকুঞ্জে ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা এই দেশে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করেছে, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা যারা করেছে, তারা কারা? এরা বিএনপি, যারা আমার দেশের অগণিত মায়ের কোল খালি করেছে, যারা আমার দেশে লাশের পর লাশ, লাশের পাহাড় সৃষ্টি করেছে, যারা রক্তে রক্তে বাংলাদেশকে রক্তের দরিয়া বানাতে চায়, সেই অপশক্তি জামায়াত মাঠে নেমেছে। জামায়াত মাঠে নামেনি, তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা, তাদের আসল মুরব্বি বিএনপি।’
‘তারা নির্বাচনে নিবন্ধিত দল নয়। কিন্তু তাদের নামানোর অর্থ হলো—বিএনপির আগুনসন্ত্রাসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বিএনপি আবারও ভাঙচুর করবে, আগুন নিয়ে বাস পোড়াবে, মানুষ পুড়িয়ে মারবে। আজকে ওই রাজনীতি যারা করে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে… সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। ১৭ কোটি মানুষের একমাত্র শত্রু হচ্ছে বিএনপি।’
বিএনপিকে ক্ষমতালোভী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য তারা পারে না, এমন কোনো অপকর্ম নেই। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র গিলে খাবে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শ গিলে খাবে, ভোটের বাক্স গিলে খাবে। আবারও হাওয়া ভবন খুলে লুটপাট করবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের জায়গায় খাম্বা আসবে।’
সংলাপ নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা নাকি দুইবার প্রতারণা করছি! আমরা তো আপনাদের ডাকছি না—আসেন, আসেন। সাধিলে আবার খাইবো, সেটা আমরা জানি। তত্ত্বাবধায়কটা মানলে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, সংসদটা বিলুপ্ত হলে…তাদেরকে সাধবে কে? হাওয়া? কার সাথে বসবে? বাতাসের সাথে সংলাপে বসবেন পদত্যাগ করলে?’
সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আবারও এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নালিশ করে করে নিষেধাজ্ঞা আনতে চেয়েছেন। ভিসানীতিতে আমরা ভয় পাই না। কারণ, আমাদের মনের জোর আছে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করবো। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। অপকর্ম করলে বিএনপিকেই তার মূল্য দিতে হবে, সেটা যেন তারা ভুলে না যায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির মাথার মধ্যে এখন তিনটা ভূত ঢুকেছে। এক ভূত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আরেক ভূত শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আরেক ভূত সংসদের বিলুপ্তি। এই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাইলে বিএনপির মাথা থেকে এই তিন ভূত নামাতে হবে।’
‘মির্জা ফখরুল এখন জ্যোতিষীর মতো কথা বলে। ফখরুল বলে, এখন নাকি নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ ভাগ ভোটও পাবে না। তারাই তো বলেছিল, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসবে না। এখন তো একাধারে ১৫ বছর হয়ে গেছে। আল্লাহ যাদের রাখবে, জনগণ যাদের রাখবে, তাদের কেউ হটাতে পারবে না।’
বিএনপিকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মির্জা খরুল সাহেব যখন বলছেন, আওয়ামী লীগকে ১০ ভাগ আসনও দেবেন না, তাহলে বুকে যখন এতই বল, নির্বাচনে আসেন। খেলা হবে। আসেন খেলার মাঠে। খেলার মাঠে না গিয়ে ফাউল শুরু করেছেন। বন্ধ হয়ে যাবে লাফালাফি…বাড়াবাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ যখন খেলার মতো খেলতে নামবে, তখন আপনাদের পালাবার পথ থাকবে না।
‘লাফালাফি কিছুদিন করে গণঅভ্যূত্থান, খালেদা জিয়া দেশ চালাবে, তারেক রহমান এয়ারপোর্টে আসবে, দিন তারিখ সব ঠিক…যেখানে সমাবেশ সেখানে লোটা নিয়ে, কম্বল নিয়ে, পাতিলের পর পাতিল, গরুর মাংস, জেলায় জেলার সাত দিন ধরে সমাবেশের আগে তারা পাঁয়তারা করেছে। লোকে বলে, এটা কি সমাবেশ নাকি পিকনিক? বিএনপি সমাবেশের নামে পিকনিক পার্টি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পদযাত্রা একবার করেছে, আবার পদযাত্রা…শরিক হলো ৫২ দল। এখন কত দলের জগাখিচুড়ি ঐক্য আছে? যে ঐক্যের নেতা নেই, মানুষ নেই, সেই ঐক্য কখনও আন্দোলনের রূপ নিতে পারে না।’
‘দেশের যত আন্দোলন হয়েছে, নেতা লাগে। তাদের দুই নেতাই কারাদণ্ডিত। এক নেতা হাসপাতালে, আরেক নেতা লন্ডনে। মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে, আমি আর রাজনীতি করব না। অর্থপাচার করে পালিয়েছে, এখন রাজনীতি নাকি করবে না, কিন্তু অনলাইনে ফখরুলকে ফরমায়েশি বক্তব্য দিচ্ছে। আদালতের নিষেধ, তারপরও আদালত মানে না, এই দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করছে। টেমস নদীর পাড় থেকে আন্দোলনের ফরমায়েশ আসছে। বাংলাদেশে যদি আন্দোলন চান, তাহলে আজকে বিদেশ থেকে আসুন, সৎ সাহস থাকলে মোকাবিলা হবে। কে জিতবে, কে হারবে, বাংলার জনগণ সেটা নির্ধারণ করবে।’
আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরে রাখা যাবে না, মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা মাঠে আছি, মাঠেই মোকাবিলা করব।
তিনি বলেন, রূপরেখা তৈরি করার জন্য প্রতিদিন এত বৈঠক, এত দলের সবই কি ভুয়া? ৫২ দল, ২৭ দফা, ১০ দফা ভুয়া; পদযাত্রা ভুয়া; আন্দোলনের রূপরেখা ভুয়া। প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। মোকাবিলা হবে। তবে, ফাউল করলে খবর আছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফর এবং সফল জ্বালানি চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরে কাদের বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশে আর বিদ্যুতের সমস্যা থাকবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত, তাহলে আপনারা রক্তের বন্যা দেখতেন। তাদের সময় বিদ্যুৎ আর পানির দাবিতে বিক্ষুদ্ধ জনতার যখন মিছিল হয়, তখন একজন পালিয়ে যায়। তাদের এমপির নামের সাথে দৌড় যুক্ত হয়ে গেছে।’
বিএনরি শাসনমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরে থাকতে দেয়নি। এখন ফখরুল সাহেব মুখে মাইক লাগিয়ে থাকে। সাজসজ্জা করে এসি রুমে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। তখন আমাদের ওপর, আমাদের মেয়েদের নির্যাতন করেছে রাস্তায়। আর এখন তারা রাস্তায় সমাবেশ করছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।