রাজনীতি

মিথ্যাচার করে জিয়ার অবদান মোছা যাবে না: ফখরুল

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যাচার করে তার অবদান মুছে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যকে মিথ্যাচার অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু ইতিহাস বিকৃতি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি বলা হচ্ছে। সরকার পতনের এক দফার চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এবং আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করতে এসব কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রীসহ তার দলের নেতারা।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ ভুলে যায়নি, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজকে মিথ্যা প্রচার চালান—১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন—তাদের একটাই উদ্দেশ্য, জিয়াউর রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং ইতিহাস থেকে একেবারে মুছে ফেলা। তবে, সেটা সম্ভব নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কত বছর হয়ে গেল, জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছেন? পারেননি, পারবেনও না। যেসব ক্ষণজন্মা মানুষ ইতিহাস তৈরি করেন, একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেন, জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র নির্মাণের সব ভিত্তি তৈরি করেন, তাদের নাম-অবদান এভাবে মুছে ফেলা যায় না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর প্রধানও ছিলেন না। তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান। অথচ, যারা তখন সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমানবাহিনী প্রধান ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি স্যালুট করে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, স্বাধীনতার পরে দেশকে দুঃশাসনের রাজ্যে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। তারা তাদের মতো করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছিল। নিজেদের তৈরি সংবিধান ভেঙে-চুরে জরুরি অবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সবশেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে সব পত্রিকা বন্ধ এবং মানুষের অধিকার হরণ করেছিল। 

মাত্র সাড়ে তিন বছরে জিয়াউর রহমানের আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের নানা পদক্ষেপও এসময় তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, দেশ আজ গভীর সঙ্কটে। এ সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ আমাদের দেখান জিয়াউর রহমান। কারণ, ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান বুকে সাহস নিয়ে, বল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এটা একটা বিরল ব্যাপার। কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না। এরই ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া পরবর্তীকালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আবারও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী, লুটেরা এবং জনগণের সম্পদ হরণকারী সরকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে তিন পর্বে মোট ৬৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।

রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামাণিক ও শামসুজ্জামান মেহেদী প্রমুখ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।