রাজনীতি

অর্থ বা ক্ষমতার জন্য আমি বিক্রি হতে পারি না : জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ইউটিউবে কেউ একজন প্রচার করেছে, আমি নাকি বিক্রি হয়ে গেছি। এই কথাটা আমাকে আহত করেছে। চাকরি জীবনে অনেক পাওনাও গ্রহণ করিনি নীতির প্রশ্নে। আমার জন্য বরাদ্দের প্রয়োজনীয় অংশটুকু নিয়েছি। কোনো ট্যুরে আমার সঙ্গে পরিবার গেলে তাদের থাকা-খাওয়ার বিল ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করেছি। আমি একবার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছি, আরেকবার গ্রহণ করিনি। অর্থ বা ক্ষমতার জন্য আমি বিক্রি হতে পারি না।

বুধবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান খোলামেলা কথা বলেন। এ সময় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান, এমপি ও জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী উপস্থিত ছিলেন।

জিএম কাদের বলেন, ২৫ বছর চাকরি করেছি, চাকরির শেষ ১০ বছর আমি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। এর মধ্যে শেষের দুই বছর আমার হাতে দেশের সম্পূর্ণ পেট্রোলিয়াম দ্রব্য ক্রয় করা হতো। অবৈধ টাকা-পয়সার অর্জনের সুযোগ ছিল আমার, আমি কখনোই করিনি। ২৮ বছরের রাজনীতিতে ২০ বছর এমপি, পাঁচ বছরে দু’টি মন্ত্রণালয় চালিয়েছি। আমি বিক্রি হওয়ার লোক নই, আমি দল এবং দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করি।

তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, ভারত শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর নির্বাচন চায়। তারা চায় নির্বাচনের আগে ও পরে যেন কোনও সহিংসতা না হয়। কে ক্ষমতায় আসবে বা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে ভারতের কোনও বক্তব্য নেই। তারা মনে করে এসব বিষয় ঠিক করবে দেশের জনগণ, এগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। ভারত চায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বিষয়গুলোতে যেন কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো বিষয় আছে। তাই তারা কখনোই চায় না বাংলাদেশে কোনও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয় নিয়েই কথাবার্তা হয়েছে ভারতের সঙ্গে।

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি বলতে চেয়েছি, দুটি দেশের সরকারপ্রধান বা যে কোনও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যৌথ একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। দুটি পক্ষ যেটুকু প্রকাশে সম্মত হবে, ততটুকুই প্রকাশ করা হয়। এর আগে একটি খসড়া করা হয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিদেশিদের সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলি। তখন তারা জেনে নেন, এই আলোচনার সংবাদ টুইট করা যাবে কি না, ছবি দেওয়া যাবে কি না বা আলোচনার কতটুকু প্রকাশ করা যাবে। আমরা সম্মতি দিলেই তারা টুইট করতে পারেন। আমরা গণমাধ্যমকে বলতে গেলেও তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিই। এটাই বাস্তবতা।

জিএম কাদের বলেন, গণমাধ্যমকে আমরা কী বলব, কী বলব না- ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলিনি। তাই বিস্তারিত বলতে গেলে তাদের সঙ্গে আলাপ করাটা হচ্ছে ভদ্রতা। অনেক সময় খোলামেলা আলোচনায় অনেক কথাই হতে পারে। একজন একটি কথা বলেছে, আমি হয়তো অন্যভাবে বুঝেছি। তখন তারা বলতে পারে আমি তো এভাবে বলিনি। তাই এগুলো নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। সেদিন স্পর্শকাতর বিষয় মনে করে কথা বলার সময় ‘অনুমতি’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘সম্মতি’ শব্দটি ব্যবহার করলে আরও ভালো হতো। আমি যে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তাদের সম্মতি ছাড়া প্রকাশ করাটা ভদ্রতা মনে করি না। এমন একটি নিয়মও আছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ভারত সরকার দাওয়াত করেছে। নিজ খরচে সহযোগী নিয়ে ভারত সফর করেছি। ভারত সরকার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বা ব্যক্তি জিএম কাদের’র সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। দ্বি-পাক্ষিক কিছু বিষয়ে কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভারত গিয়েছিল দলীয়ভাবে এবং সেদেশের সরকার দলীয় আমন্ত্রণে। আমি আগেও গণমাধ্যমকে বলেছি, জাতীয় পার্টির প্রতি ভারত সরকারের আগ্রহ আছে। তারা মনে করে, ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে এবং তারা সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের বিশ্বাস জাতীয় পার্টি একটি সম্ভাবনাময় দল, আগামীতে ভালো করতে পারবে। তারা আশা করে, ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও ভালো হবে এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরস্পরের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

জিএম কাদের বলেন, দেশে ফিরে বিমানবন্দরে ঠেলাঠেলির মধ্যে হঠাৎ কথা বলায় ঠিকমত শব্দ চয়ন হয়নি, তাই কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এর কিছুটা সমালোচনাও হয়েছে। আমি ঠিক বোঝাতে পারিনি, এটা আমার ব্যর্থতা।