রাজনীতি

কীভা‌বে অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ কর‌তে হয়, আমরা জা‌নি: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ না কর‌লে কীভা‌বে বন্ধ কর‌তে হয়, তা জানা আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতায় জড়িতদের প্রতিহত করতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জা‌নি‌য়ে তিনি বলেছেন, যারা আগুন দেয়, তাদের ওই আগুনে ধরে ফেলতে হবে। হাত পুড়িয়ে দিতে হবে, তাহলে শিক্ষা হ‌বে।

শ‌নিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর আরামবা‌গে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।মেট্রো‌রেলের আগারগাঁও থেকে ম‌তি‌ঝিল অং‌শে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন এবং এমআর‌টি লাইন-৫ এর ‌নির্মাণকা‌জের উদ্বোধন উপল‌ক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

জ্বালাও-পোড়াও-ধ্বংস করা বিএনপির স্বভাব, মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করা, সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে? কে অধিকার দিয়েছে? তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্টি। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ না করে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয়, সেটাও আমাদের জানা আছে। আমরা ছাড়ব না।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে। 

বিএনপিনেতারা গাড়িতে চড়ে না? এ প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের গাড়ি নেই? জিনিসপত্র নেই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে, তখন তারা কোথায় যাবে? কী করবে? সেটাও তাদের ভাবা উচিত। আমরা ওসব বিশ্বাস করি না বলে এখনো ধৈর্য্য ধরে আছে দেশের মানুষ। কিন্তু কতদিন? 

উস্কানি দিয়ে পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হয়েছে, মন্তব্য করে তিনি বলেন, উস্কানি দিয়েছে তারা (বিএনপি)। অথচ এই শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন কাজ করছিল। বিএনপির আমলে মাত্র ৫০০ টাকা মজুরি ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পরেও বেতন বাড়ানো হয়েছে। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ১ টাকাও বাড়ায়নি। শ্রমিকদের বেতন আওয়ামী লীগ ১০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। 

শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কমাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবে। আপনাদের যা প্রয়োজন হয়, অসুবিধা হয়, আমরা দেখি। পারিবারিক কার্ডও নিতে পারেন।’ 

কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তো কিছু করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারই। আওয়ামী লীগ জানে মানুষের কষ্ট দূর করতে। 

তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। কারা উস্কানি দিচ্ছে, সেটা আমরা জানি।’  

দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেন দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, অত্যাচার করতে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা আমরা ঠিক করে দেবো। যাকে মনোনয়ন দেবো, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়নের কাজ বাকি, সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, ওই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা আসলে এ দেশকে টিকতে দেবে না। সেজন্য জনগণের স্বার্থে, কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে।

ঢাকাবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছি বলেই আজকে এত উন্নতি হচ্ছে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে। আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে, যাকেই প্রার্থী করি—সেটা কানা, খোড়া যেই হোক—তাদের নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। করবেন কি না, হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার নৌকা জিতবে। আবারও বলব, এ দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, সেটাই চাই। 

২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর বিএনপির আক্রমণের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (পুলিশ) কী দোষ করেছিল? তারা তো চাকরি করে, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়। 

শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তারা চালিয়ে যাচ্ছে। ওরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই বোঝে। কিন্তু, এ ষড়যন্ত্র করে কোনোদিন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, কথায় কথায় বিদেশের মানুষের কাছে নালিশ করে। কারণ, দেশের মানুষের কাছে ঠাঁই নেই। সেজন্য বিদেশে নালিশ করাটাই তাদের বদঅভ্যাস। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সারা পৃথিবীতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মূল্যস্ফীতিতে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যাতে স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারে।   

সমাবেশে বক্তব্য শেষ করার আগে প্রধানমন্ত্রী ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘এবার জিতবে নৌকা’ স্লোগান দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।