আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একান্তে কথা বলেন জিএম কাদের। বৈঠকে কী কথা হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়নি। এ বিষয়ে জিএম কাদেরও মুখ খুলেননি। বরং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে দ্রুতগতিতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। আগে থেকে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীরা চেষ্টা করেও তার নাগাল পাননি।
বৈঠক নিয়ে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, চা আপ্যায়নের কথা অফিসিয়ালি বলা হলেও মূলত আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণই আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে কী কী সুবিধা পাবেন, সেটা আগেই নিশ্চিত করতে চান জিএম কাদের। তাছাড়া নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টি যায়, সেটা বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশনের নেতৃত্বে নয়, বরং জিএম কাদেরের নেতৃত্বেই হতে হবে। এসব বিষয় বাস্তবায়ন হলে শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের নির্বাচনে যেতে পারেন। এমনকি, জিএম কাদের জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য শতাধিক আসনের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দিয়েছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে। তবে এটির সত্যতা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজের প্রকাশিত বই উপহার দেন। এ সময় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মশরুর মাওলা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, আগে থেকেই মশরুর মাওলার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যানের সাক্ষাতের সময়সূচি ঠিক করা হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি গোপনে হওয়ার কথা ছিল। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে জানানো হয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে গেছেন জিএম কাদের।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা চাউর হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নীতি নির্ধারণী সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে রাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বৈঠক হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন তিনি। তাছাড়া আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে কি না, গেলে কোন পদ্ধতিতে যাবে- সবকিছু নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দর কষাকষিও হতে পারে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জিএম কাদেরের সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আসলে রাজনৈতিক কোনও বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক, এমন কিছু নয়। নিছক সৌজন্য সাক্ষাত। তিনি চা আপ্যায়নের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পার্টির চেয়ারম্যান আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। অন্য কিছু নয়।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। সভা, সমাবেশ বক্তৃতায় রাষ্ট্রপরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছেন। দেশে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী সমমনা দলগুলোর চলমান আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান না নিলেও ভেতরে ভেতরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে কি না, এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। বরং এ পরিস্থিতিতে দলের অধিকাংশই নির্বাচনের পক্ষে নয়। কিছুদিন আগে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বাসায় কো-চেয়ারম্যানদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধিকাংশ কো-চেয়ারম্যান বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে বিপক্ষে মত দেন। তবে পরিস্থিতি বুঝে আন্দোলন সফলতার দিকে গেলে নির্বাচন বর্জন, কিংবা পরিস্থিতি ইতিবাচক হলে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির পৃষ্ঠপোষক, সংসদের বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আগ থেকেই এক পা দিয়ে রেখেছেন। তার অনুসারী নেতারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।