আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন উল্লেখ করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববার এ চিঠি ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে দেওয়া হয়েছে এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর চিঠি গ্রহণ করেছেন।
ওই চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে— প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করতে রাষ্ট্রীয় মদদে চলমান অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরা তালিকা করে ধারাবাহিকভাবে, বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক বিশেষত অগ্নিসন্ত্রাসের বানোয়াট অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের সদস্যদের টার্গেট করছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে।
চিঠিতে বিএনপি জানিয়েছে, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি বিতর্কিত নির্বাচনের পটভূমিতে, আবারও আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনমূলক ও সহিংস কারচুপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথাকথিত এই ‘‘ডামি নির্বাচন’’ সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে নাশকতা চলছে, তাতে শুধু গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই নন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ। বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে, জনগণের জান-মাল ও নিরাপত্তা-স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ।’
সহিংসতার বিষয় উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চলমান অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার একমাত্র সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র। আর প্রধান ভুক্তভোগী বিএনপি। ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো তদন্ত, তথ্য বা সূত্র ছাড়াই প্রতিটি ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এই ধ্বংসযজ্ঞকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নকে উসকে দিচ্ছেন, যা শেখ হাসিনার প্রতিহিংসামূলক বক্তব্যে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং চারজন যাত্রী মারা যান। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিশেষভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। নাশকতার সুস্পষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনা ডিএমপির কাছে কীভাবে এলো এবং তারপরও এটি রোধে কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না, জনমনে এসব প্রশ্ন রয়েছে।’
চিঠিতে দশটি অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনা উল্লেখ করে তাতে সুনির্দিষ্টভাবে ওইসব ঘটনার সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করে বিএনপি। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি যানবাহন ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একটি গাড়ির চালক ও সহকারী স্পষ্টভাবে বলেছেন, পুলিশ তাদের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। মালিবাগে পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া ব্যক্তিরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ২১ নভেম্বর ভোলায় এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং ২৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মারা যান। ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য পুলিশ সমস্ত প্রমাণ ধ্বংস করে ফেলে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যতবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, আওয়ামী লীগও একই দিনে পরিকল্পিত নাশকতার উদ্দেশ্যে কর্মসূচি আহ্বান করেছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। একটি সত্যিকারের নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিব্রতকর পরাজয় অনিবার্য।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বানোয়াট অভিযোগ ও গায়েবি মামলাগুলো সাজানো হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের যৌথ এই উদ্যোগ আসলে সরকারের মাস্টার প্লানেরই অংশ। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহের ওপর দায় চাপিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রায় ২৫,০০০ গণগ্রেপ্তার ও ২৭ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা— গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের আলামত স্পষ্ট।’