আওয়ামী লীগের ভাগ ‘বাটোয়ারার’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। এ কারণে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করতে দেশপ্রেমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনবিরোধী চলমান আন্দোলনে শরিক ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে পল্টন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘একদলীয় নির্বাচন ও জাতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, যারাই ভোটে গেছেন সবাই সরকারি দলের সমর্থক। সমঝোতা করেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবাই নির্বাচন করছেন। একটা দল খুঁজে পাবেন না, যারা আলোচনা ছাড়া গেছেন। এমনকি, শেষ মুহূর্তে যারা নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন তাদের মুখেও সেই সত্য কথা উচ্চারিত হচ্ছে। তারা নিজেরা স্বীকার করছেন, আওয়ামী লীগ কথা না রাখায় নির্বাচন বর্জন করছেন। কাজেই সমঝোতার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে একটি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা করছি। তাই বলে আমরা বসে থাকবো না। আমরা আমাদের মত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচন হয়ে যাবে, কিন্তু তারপরও আপনাদের বলবো, নির্বাচনে ভোট দিয়ে তামাশার নির্বাচনের অনৈতিক সঙ্গী হবেন না।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দির পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সমমনা দল খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমি, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জমিয়তের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি বশিরুল হাসান খাদিমানী, মাওলানা আবুল বশর, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, মাওলানা আকতারুজ্জামান প্রমুখ।
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমি বলেন, জমিয়ত, খেলাফতসহ আমাদের চারটি শরিকদল দেশ ও জাতির স্বার্থে এই তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। শেষ পর্যন্ত আমরা সম্মিলিতভাবে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছি। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে এই প্রহসনের নির্বাচনে না গিয়ে জনগণের পাশে অবস্থান নিয়েছি। শেষ মুহূর্তে ওই অবস্থানে অটল রয়েছি আমরা। এজন্য, আমরা মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশে পাঁচ বছর পর নির্বাচন হবে। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। প্রার্থীরা জনগণের কাছে যাবে, জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু সংশোধনী এনে আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলনের ফসল তত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছে। কারণ তারা এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
মাওলানা কাসেমি বলেন, সরকারের বড় সফলতা হলো বড় একটা দলকে রাজনীতি থেকে তারা কোণঠাসা করে ফেলেছে। তাদের বাদ দিয়ে বহুদলীয় নির্বাচনের নামে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে ১৪ দলীয় জোট, মহাজোটসহ ভোটের মাঠে একাধিক অ্যাকাউন্টকে মাঠে নামানো হয়েছে। সংবিধানের নামে একটা প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে। নিজেদের দশ শতাংশ ভোটারকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে রেখে দিনভর ভোটগ্রহণ করা হবে। এভাবে পরিকল্পিত ভোট দেখিয়ে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবেশি দেশ ভারতের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
জমিয়তের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, আমরা পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন গ্রহণ করিনি। তাই বলে আমরা বসে থাকবো না। প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। ভোটদান থেকে বিরত থাকতে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, দেশের মানুষ তামাশার নির্বাচনে যাবে না। দেশবাসীকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানান আফেন্দি।
‘মামা-ভাগিনাদের বাগ বাটোয়ারার নির্বাচন’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা মামা-ভাগিনাদের বাগ বাটোয়ারার নির্বাচন, মেলা বললেই চলে। এই তামাশার মেলায় আপনারা দেখেছেন, অনেক দলের প্রার্থী দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে নৌকা চায়। মানে হলো নৌকা পাইলে এমপি হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া নাই, কারণ বল এখন জনগণের কাছে। যে নির্বাচন হচ্ছে, সেটা জনগণের হাতে। জনগণ ভোট না দিলে সরকারের মিশন ফেল করবে। তাই সবাইকে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে হবে। ৭ জানুয়ারি জনগণ ভোট না দিয়ে প্রমাণ করবে তামাশার এই নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে।