‘নির্বাচন এলে আমাদের মাথা বিক্রি করেন, আর মাথা বিক্রি করবেন না। সংসার, দোকান পাট বিক্রি করে নির্বাচন করেছি, নিঃস্ব হয়ে গেছি। বলতে কান্না আসছে, কি বলবো, নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হামলার মুখে নির্বাচনি মাঠে ছিলাম। কথা দিয়েও আমাদের একটা টাকা দিলেন না। চেয়ারম্যান মহাসচিব একটি বার ফোন ধরলেন না। আপনাদের সহযোগিতা তো চাইনি, কিন্তু আমাদের জন্য যে টাকা আসলো সেটা কোথায় গেলো, আপনাদের জবাব দিতে হবে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে উদ্দেশ্য করে রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হলে এক মতবিনিময় সভায় বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা এসব কথা বলেন।
নির্বাচনে ভরাডুবি, দলীয় ও নির্বাচনি ফান্ড কুক্ষিগত করে রাখা, শেরিফা কাদের এর আসনের বিনিময়ে সিনিয়র নেতাদের বাদ দেওয়া, নির্বাচনে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। তাদের ধারাবাহিকতায় প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চিঠি ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই কর্মসূচি ভেস্তে দিতে দলীয় চেয়ারম্যান ও মহাসচিব চেষ্টা করলেও প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে দুপুরের মধ্যে কাকরাইলের সভাস্থল ভরে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৭০ এর বেশি প্রার্থী উপস্থিত হন। সভাপতিত্ব করেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা -৪ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাবেক এমপি ইয়াহয়া চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, হাসান ইফতেখার, মিজানুর রহমান মিরু, সাহিন আরা চৌধুরী রিমা, সুজন দে, শাহনাজ পারভিন প্রমুখ।
তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ-৩ এর আব্দুল বাতেন, সিরাজগঞ্জ-৫ এর ফজলুল হক নুরু, নোয়াখালী-৩ এর ফজলে এলাহী সোহাগ, সিরাজগঞ্জ-৬ এর মুখতার হোসেন, সিরাজগঞ্জ-১ এর জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর-৪ এর শামসুদ্দিন খান, ভৈরবের নুরুল কাদের সোহেল প্রমুখ।
চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এমপি ও সিলেট এর প্রার্থী ইয়াহয়া চৌধুরী বলেন, আপনি গণতন্ত্র শিখিয়েছেন, আপনার মধ্যে গণতন্ত্র নেই। আপনি স্ত্রীর জন্য ফিরোজ, বাবলা, খোকা, পীর ফজলু, আতিক, ভাসানিসহ নয়টি সিট কোরবানি দিয়েছেন। সমাঝোতার আসনের জন্য চেয়ারম্যান নিজের স্ত্রী, নাতি আর মেয়ের ভাসুরের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
তিনি বলেন, আপনার স্ত্রী শুধু আপনাকে রান্না করে ভাত খাওয়ান, দলে তার কি অবদান বলেন। আমাদের টাকা আপনারা ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। আপনাদের জবাব দিতে হবে।
নোয়াখালীর ফজলে এলাহী সোহাগ বলেন, চেয়ারম্যান আপনি হাজির নাজির করে ওয়াদা দিয়েছিলেন, এককভাবে নির্বাচন করবেন, নির্বাচনে আমাদের পাশে থাকবেন, কিন্তু আপনি কোনো কথা রাখেননি। আমাদের পথে নামিয়ে দিয়েছেন। আপনি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে নীতিকথা বলতেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পরিবর্তন হয়ে গেছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কেরানির মতো ফাইল নিয়ে আপনার পেছনে ঘুরেন। তিনি দলের প্রেসিডিয়াম কি করে হয়।
সিরাজগঞ্জের প্রার্থী ফজলুল হক নুরু বলেছেন, আমাকে আজকের মিটিং এ আসতে বহিস্কারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি এসেছি, দুঃখ কষ্টের কথা বলতে। আমাকে বহিষ্কার করবেন, করেন। আগে বাবলা, খোকাদের করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, আগেও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আলীগের প্রার্থীকে এনে লাঙল দেওয়া হয়। মনোনয়ন বাণিজ্য করলেন। দলকে এভাবে শেষ করে দেবেন না।
সিরাজগঞ্জের মুখতার হোসেন বলেন, রক্ত মাংস দোকান পাট বিক্রি করে নির্বাচন করেছি। স্বতন্ত্র ও নৌকার লোকদের হামলার মুখে জীবন যায়, কিন্তু দলের কোনো সহযোগিতা পাইলাম না। একটু দেখা পর্যন্ত দিলেন না। তারা আমাদের বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তারা ফোন ধরেনি কারণ তারা টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ভৈরবের নুরুল কাদের সোহেল বলেন, আমরা সব কিছু দিয়ে নির্বাচন করেছি। একটু খবর নেয়নি, দশটা টাকা দেয়নি। আর কত মাথা বিক্রি করবেন। নির্বাচন আসলে আর মাথা বিক্রি করবেন না।
মুন্সীগঞ্জের আব্দুল হামিদ খান ভাসানি বলেন, আমার সমঝোতার আসন বহিরাগতকে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব চার আন্ডা (ডিম) বেষ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। এই আন্ডামুক্ত না হলে দল ধ্বংস হয়ে যাবে।