রাজনীতি

জিএম কাদের বড় স্বৈরাচার, জাপা মুদির দোকান

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সবাই স্বৈরাচার ডাকলেও তিনি আসলে স্বৈরাচার নন, বরং পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানই বড় স্বৈরাচার বলে মন্তব্য করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও পার্টির রিসার্স উইং’র যুগ্ম আহ্বায়ক সাহিন আরা সুলতানা। অন্যদিকে, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু অভিযোগ করে বলেন, জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে মুদির দোকানে পরিণত করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রুমে জিএম কাদেরের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ দুই নেতা এমন মন্তব্য করেন।

জাপা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে সাহিন আরা সুলতানা বলেন, আজকে ব্যানারে এরশাদের ছবি। সবাই বলে এরশাদ স্বৈরাচার। আসলে এরশাদ নয়, স্বৈরাচার ছিলেন জিএম কাদের ও মহাসচিব চুন্নু। নেতাকর্মীদের তারা পাত্তা দেন না, তারা নিজেদের মত চলেন। আজ আমরা ভারাক্রান্ত। নেতাকর্মীরা দলের প্রাণ, তারা যখন গণহারে পদত্যাগ করেন, তাদের লজ্জায় ডুবে যাওয়া উচিত। তার বিবেকহীন। বিবেকহীন মানুষ পশুতে পরিণত হয়। তাদের অবস্থাও তাই। আপনারা বুঝতে পারছেন।

তিনি বলেন, এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির সবচেয়ে অযোগ্য ব্যক্তি যদি কেউ থাকেন, তিনি জিএম কাদের, পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান। যারা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে জানেন না, তারা নেতা হওয়ার যোগ্য না। বারবার বলেছি, মাটিতে পা রাখেন, নিচের দেখেন, কর্মীদের দেখতে পাবেন। কিন্তু তারা আকাশে উড়তে শুরু করেছেন। এভাবে পার্টি হয় না, আসলেই হয় না।

বহিষ্কার করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নেতাকর্মীদের মুখ বন্ধ করে দিতে চান অভিযোগ করে দলের এই নেত্রী বলেন, ১৪ জানুয়ারি আমাদের বক্তব্য ছিল, সবার দুঃখ-কষ্টের কথা বলতে সেদিন আমরা সবাই একত্রিত হয়েছিলাম। আমরা সবাই একতা চেয়েছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান ও মহাসচিব,একতা নয়, একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। এভাবে আসলে কোনও দল চলতে পারে না।

‘একটা পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বাবা-মায়ের মতো অভিভাবক। নেতাকর্মীরা সন্তানতুল্য। তারা সন্তানদের ব্যথায় ব্যথিত না হয়ে, কথা না শুনে কী করলেন? দু’ঘণ্টার মাথায় উত্তরের প্রাণ সেন্টু ভাইকে বহিষ্কার করে দিলেন। একে একে বহিষ্কার করছেন নেতাকর্মীদের। তারা কেমন অভিভাবক? নেতাকর্মীদের কাছে না টেনে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। আসলে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের অনেক সুযোগ ছিল জাতীয় পার্টিকে গুছিয়ে নেওয়ার। কিন্তু তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন’- যোগ করেন সাহিন আরা।  

পড়ুন- জিএম কাদেরের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’, জাপার নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ 

অন্যদিকে, ‘জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে মুদির দোকানে পরিণত করেছেন’ অভিযোগ করে দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, আজকে গণপদত্যাগের উদ্যোগ কেন নিয়েছেন? যে হারে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বহিষ্কার ও অন্যায় কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু এটার প্রতিবাদ করা যায় না। কেন করা যাবে না, কারণ এটা তারা তাদের নিজের দল মনে করেন। তারা মনে করেন, এটা তাদের মুদির দোকান। একটা মুদির দোকানের মালিক আছে না? জিএম কাদের মনে করেন জাতীয় পার্টি একটা মুদির দোকান। সকালে আসেন, সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে যান। মানে একটা দোকানদারের মত সকালে আসেন, হিসাব-কিতাব করে সন্ধ্যায় বের হয়ে যান। এখানে খাওয়া-দাওয়া করেন। কোন দলের চেয়ারম্যান আছেন, সকালে অফিসে আসেন সন্ধ্যায় যান? তিনি কী করেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। সারাদেশে কোনও সভা-সমাবেশ করেননি, শুধু অফিস করেন। পার্টিকে তিনি ধ্বংস করে ফেলেছেন। দলের এই বিপর্যয়ের জন্য জিএম কাদের ও মহাসচিব দায়ী, তারা ব্যর্থ। এজন্য আপনারা সরে যান। আমরা পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শের সৈনিক। আমরা এগিয়ে যাব। দল আপনার না, কোনও বাধা সৃষ্টি করবেন না।

জাপায় জিএম কাদেরের নিজস্ব একটা ফোরাম আছে অভিযোগ করে সেন্টু বলেন, তার একটা ফোরাম আছে। আমি সেদিন বলেছি, ঘুঘু দেখেছেন ফাঁদ দেখেননি। এখন চারটা ফাঁদ আছে, ওই ফাঁদ সে নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি নিজে দলে কিছু লোক তৈরি করেছেন। যারা সারাদিন তার দোকানদারি করে শেষে হিসাব দেন, তারপর বাসায় চলে যান। তাদের এই ফোরামের ফাঁদে পড়ে গেছেন তিনি। এখান থেকে বের হতে পারবেন না।

‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, দেখতে চাইলে দেখাতে পারবো। মিডিয়ার মাধ্যমে দেখাতে চাই, তার আশপাশে যারা আছেন তারাই ডোবার ফাঁদ। এই ডোবার ফাঁদে তিনি পড়ে গেছেন, সেখান থেকে উঠতে পারবেন না। তিনি লাটিমে ঘুরছেন, সুতো মহাসচিবের হাতে। দোয়া করি, তিনি যেন লাটিমে আর না ঘুরেন।’   

মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নজরুল ইসলাম মুকুল বলেন, যে ইমাম নামাজে ভুল করে তার নেতৃত্বে নামাজ পড়া যায় না। তেমনি জিএম কাদেরের মত একটি লোকের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি করা সম্ভব নয়, গুড বাই জাতীয় পার্টি।

শেরেবাংলা থানা জাপার সভাপতি আশরাফুল হক শিবলী বলেন, জিএম কাদের পার্টিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেছেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন তার কাছে নেই, মূল্যায়ন করা হয় চাটুকারদের। সেন্টুর মত নিবেদিত প্রাণকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি থেকে আমরাই পদত্যাগ করছি।

হাতিরঝিল থানা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, ’৮২ থেকে এ দল করে আসছি। পল্লীবন্ধু এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিকে জিএম কাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়।

পল্লবী থানা সভাপতি আসাদ খান সামী বলেন, উনি (জিএম কাদের) নিজেকে জনবন্ধু দাবি করেন। উনি তো কর্মীবন্ধুই হতে পারেননি। জনবন্ধু হন কীভাবে। আপনি (কাদের) কী আমাদের অব্যাহতি দেবেন, আগামী দিনে আমরাই আপনাকে অব্যাহতি দেব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। এ সময় মোহাম্মদপুর, আদাবর, পল্লবী, হাতিরঝিল, মিরপুর, দারুসসালাম, শেরেবাংলা, বাড্ডা, রূপনগর থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৯৬৮ নেতাকর্মী জিএম কাদেরের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- রূপনগর থানা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ খান, আদাবর থানা সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল, ছাত্র সমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানা যুব সংহতির সভাপতি আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

উপস্থিত ছিলেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, কেন্দ্রীয় নেতা খোরশেদ আলম খুশু, আবুল আহসান জুয়েলসহ মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।