রাজনীতি

ভারত সফরে ‘গঙ্গার পানিবণ্টন’ বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলেন খালেদা: কাদের 

বিএনপির নেতাদের মুখে দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বড্ড বেমানান, মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ভুলে গিয়েছিলেন।’ 

শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করেন, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের সফরে এই চুক্তি নবায়নের বিষয়টিও উঠে এসেছে। 

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলটির অতীত মনে করিয়ে দিয়ে সোমবার (২৪ জুন) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের আমলে ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দুই দেশের সীমানা জটিলতা নিরসনে সীমান্ত ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।’ 

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার নিশ্চিত করার হয়েছেউল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্যদিকেবিএনপির সময় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালন ঘটেছিল। ভারতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়ায় দুই দেশের মধ্যে অনাস্থা দেখা দিয়েছিল। 

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাকের মতো ঘটনা ঘটেছিল। বিএনপি তো সেই দল, যারা ভারতের নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভের পর ভারতীয় দূতাবাসের দরজা খোলার আগেই অভিনন্দন জানাতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিল। 

‘পরিতাপের বিষয় যে, তারাই আজ বাংলাদেশে ভারতবর্জন ও ভারতবিদ্বেষী রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। এটা তাদের চিরাচরিত দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি যে কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক দরকষাকষি করে বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদাপূর্ণ স্বার্থ সুরক্ষিত করেছেন’, বলেন ওবায়দুল কাদের। 

বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘নিয়মমাফিক অপপ্রচার ও মিথ্যাচার’-এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা দেশ ও জনগণের মর্যাদা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার পরিচালনা করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতে তার প্রধান বিবেচ্য— দেশের জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তা। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরও এর ব্যতিক্রম নয়। 

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত চমৎকার, ফলপ্রসূ ও আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল, দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই সফরে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি ও অর্জনগুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। যেখানে ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ১৩টি সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এসেছে।’ 

তিনি বলেন, বিএনপি ও মির্জা ফখরুলরা কখনো বর্তমান সরকারের কোনো প্রকার সফলতা দেখে না। ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে কৌশলগতভাবে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। শেখ হাসিনা এই সফরে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। 

বিএনপির শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল, উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা এই আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। যার ফলে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ভারতের ই-মেডিক্যাল ভিসা চালুর সিদ্ধান্তে দুই দেশ একমত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের জনগণের ভোগান্তি কমবে। এছাড়া, নতুন নতুন রুটে বাস-ট্রেন চালু এবং নতুন উপ-হাইকমিশন খোলার ঘোষণা দুই দেশের মানুষের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন ছিল এই সফরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে মতদ্বৈততা রয়েছে। এই সমস্যা থাকার পরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুস্পষ্টভাবে তিস্তার পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।’ 

ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বিরাজমান অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোর সমাধান শান্তিপূর্ণ উপায়ে হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।