রাজনীতি

আন্দোলন যৌক্তিক, কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী

কোটা পদ্ধতি বা‌তি‌লে শিক্ষার্থী‌দের আন্দোল‌নে সমর্থন জা‌নি‌য়ে চাক‌রি‌তে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধান পরিপন্থী ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তি‌নি এমন মন্তব‌্য ক‌রেন।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ব‌লেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক আন্দোলন। সব সমাজের মানুষই বৈষম্য পছন্দ করে না। বৈষম্যময় সমাজকে সুষ্ঠু সমাজ বলা যায় না। বাঙালিরা ব্রিটিশ আমল থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। বৈষম্য থেকে বাঁচতেই তারা পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়েছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তানিরাও বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। তাই প্রথমে শুরু হলো স্বাধিকার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম শুধু বৈষম্য থেকেই বাঁচতে। স্বপ্ন ছিলো আমাদের একটি দেশ হবে, দেশ হবে বৈষম্যহীন। যেখানে নির্যাতন- নিপীড়ন থাকবে না। সংবিধানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে সংবিধান পরিপন্থী।

বি‌রোধীদলীয়‌ নেতা বলেন, বৈষম্য সৃষ্টি করতেই বাংলাকে পাকিস্তানিরা রাষ্ট্রভাষা করতে চায়নি। ভাষার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তারা। উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালিরা যেন সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। এই বৈষম্যের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ’৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের ভাইয়েরা। বৈষম্যহীন এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়তেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল। এমন অবস্থায় চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করে। সংবিধানে সাম্যের কারণে কিছু মানুষকে এগিয়ে নিতে সুযোগ দেওয়ার কথা আছে। যারা পিছিয়ে আছে, তারা যেন এগিয়ে যেতে পারে। পিছিয়ে পড়াদের কতটুকু সহায়তা দেওয়া হবে, তাও সংবিধানে বলা আছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা তাদের উত্তরাধিকারদের কোটা পদ্ধতিতে সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নি‌য়ে সরকা‌রের সমা‌লোচনা ক‌রে গোলাম মোহাম্মদ কাদের ব‌লেন, প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করা হয়েছিল, এখন তা ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি করা হয়েছে। এটা নিয়ে বহু কন্ট্রোভার্সি আছে। মুক্তিযুদ্ধকালে কারও বয়স ছিল ২ থেকে ৩ বছর, আবার কারও জন্মই হয়নি, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অনেকের মুক্তিযুদ্ধের অবদান নিয়ে সন্দেহ আছে। আবার অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, কিন্তু তারা বিভিন্ন কারণে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধে অনেকেই জীবন দিয়েছেন, তাদের সন্তানরাও জীবন দিয়েছেন, কিন্তু শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।

তিনি ব‌লেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এককালীন সুবিধা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তা অন্য কাউকে বঞ্চিত করে বা বৈষম্যের শিকার করে নয়। যেখানে একজন চাকরি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত, তাকে বঞ্চিত করে অন্য কাউকে দেওয়াটা স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। ব্রিটিশরা ডিভাইড অ্যান্ড রুল করে আমাদের নির্যাতন করেছে। ব্রিটিশদের হয়ে আমাদের দেশের সৈন্যরা এবং প্রশাসকরাই আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে। আমাদের দেশের রাজা-মহারাজারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে ব্রিটিশদের হয়ে। এখন একটি শাসকশ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তৈরি করতেই অনুপযুক্তদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। অনুপযুক্তদের বিত্তশালী করা হচ্ছে। তারা যেন সরকারের প্রতি অনুগত থাকে। কারণ, অনুপযুক্তরা জানেন, এই চাকরি বা সম্মানের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সরকারের অনুগত হয়ে থাকবে। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবহার করে কোটা পদ্ধতি চালু রাখতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য শক্তিশালী একটি অনুগত বাহিনী সৃষ্টির জন্য। সারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে শাসকগোষ্ঠী লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করতে চায়। তাই কোটাবিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই না, তবে ফিলোসফিটি আমি বলেছি। সাধারণ মানুষের ধারণা, লাঠিয়াল বাহিনী সৃষ্টি করতেই অনুপযুক্ত লোকদের শক্তিশালী করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মত অত্যাচার চালানোর অপচেষ্টা চলছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের মতই বর্তমান সরকার ডিভাইড অ্যান্ড রুল চালু করেছে।

বি‌রোধী‌নেতা ম‌নে ক‌রেন, কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে কারও অধিকার বঞ্চিত করা অন্যায়। যে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, তাকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই। যে বঞ্চিত হবেন তার মা-বাবাও বঞ্চিত হল। তাদের উত্তরাধিকারও বঞ্চিত হবেন এই পদ্ধতিতে।