রাজনীতি

‘বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা রাষ্ট্রের নির্যাতনের শিকার’ 

বন্যা ও নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা সবাই রাষ্ট্রের কাঠামোগত নির্যাতন ও খুনের শিকার বলে অভিযোগ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল ৪টায় রাজধানীতে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ করেন দল‌টির নেতারা। উত্তরবঙ্গ, সিলেট অঞ্চলসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলায় বন্যা, নদীভাঙনসহ জনগণের নানা দুর্ভোগ বিষয়ে এ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ব্রিফিংয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব এম আমজাদ খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

মূল বক্তব্যে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই মার্চ-এপ্রিল মাসে ভারতের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট অঞ্চলের হাওরসহ প্রতিটি জনপদ। অন্যদিকে, সারা বছর পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকার সকল পানি নানা খাল দিয়ে প্রত্যাহার করে নিলেও ভারত অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার সময় সকল বাঁধের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে প্লাবিত করে আসছে বছরের পর বছর। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয় মূলত সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে। কিন্তু, এ ধরনের আকস্মিক বন্য আগে দেখা যায়নি। 

পরিবেশবিদদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে নদীর নাব্য কমে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। এটা মূলত হয়ে থাকে নদীমুখে বিভিন্ন পয়েন্টে পলি, বালু জমে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে এবং শহরে বসবাসরত মানুষের সকল ধরনের বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে। দেশব্যাপ এই চলমান বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে নদীগর্ভে প্লাস্টিক জমে নদীর গভীরতা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, নদীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন খাল, বিল, পুকুর, দিঘি অবৈধভাবে ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, ৮৭৫ কোটি টাকার কিশোরগঞ্জের ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ অল-ওয়েদার সড়ক। হাওরের বুক চিরে মিথ্যা উন্নয়নের নামে রাস্তা তৈরী করা মানে পরিবেশের সঙ্গে খেলতে নামা। এতে মানবজাতি কোনোদিন জয়ী হতে পারবে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের একমাত্র বন্ধুরাষ্ট্রের সময়ে-অসময়ে দেওয়া অতিরিক্ত পানি।

এবি পার্টির এই নেতা বলেন, বন্যার সাথে সাথে পদ্মা, যমুনা ও তিস্তায় এখন শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এর ফলে প্রতিদিন বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু, এত কিছুর পরেও জনসমর্থনহীন ফ্যাসিবাদী সরকার বরাবরের মতই নীরব। মনে হচ্ছে, তেমন কিছুই যেন তাদের করার নেই। হীরক রাজার দেশে কোনো কিছুই তেমন কোনো বড় সমস্যা না। 

বন্যাতে মারা যাওয়া কিংবা নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষদের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতার সমলোচনা করে তিনি বলেন, ৪০ লাখ পানিবন্দি ও হাজার হাজার নদীভাঙনকবলিত মানুষের  জন্য ১০-১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করে মনে করা হচ্ছে, সরকার অনেক বড় সাহায্য করে ফেলেছে। অথচ, দেশে ৫ লাখ শিশুকে সাঁতার শেখানোর জন্য ২৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, সুন্দরবনের পশু গননার জন্য ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, ২০টি সিনেমা তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়!

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক, যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, আহমেদ বারকাজ নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান ব্যাপারী, রিপন মাহমুদ, মশিউর রহমান মিলু, শরণ চৌধুরী, আমেনা বেগম, ফেরদৌসী আক্তার অপি, মশিউল আজম সাকিব, পল্টন থানার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মুন্সি, সদস্য সচিব রনি মোল্লাসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।