দেশে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন ও পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনকে দুরভিসন্ধি বলে বর্ণনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ‘অরাজনৈতিক’ এই আন্দোলনে উসকানি দিয়ে সারাদেশে যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে এ নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। শোকের মাস আগস্টের দলীয় কর্মসূচি ঠিক করতে এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা, এটা অবশ্যই রিলেটেড বিষয়, অরাজনৈতিক আন্দোলন, শিক্ষকদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক। এ অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিএনপি ও তাদের সমমনাদের রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
‘এই অশুভ মহলটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে যাতে সারাদেশে বিশৃঙ্খলার আবহ না দিতে পারে সেজন্য সারা দেশে, রাজধানীতে সর্বত্র সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। সেটা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নিজেরা আন্দোলন করতে পারে না। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ভর করেছিল। এবারও তারা নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ, হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে যায়নি। এখন যদি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর করে সরকার হটানোর অভিসন্ধি-দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করা তাদের লক্ষণ। অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।’
‘কোটা সংস্কারের’ দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন এবং পেনশনের বিষয়ে শিক্ষক আন্দোলনের দুটি কর্মসূচি আওয়ামী লীগ সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে, আজকে তাদের নির্ধারিত কোনো কর্মসূচি নেই। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। এমনও আমরা শুনেছি তারা উচ্চ আদালতের যে মামলা চলছে তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন এবং আদালতে যথা সময়ে হাজির হবে। এটাও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে একটা পরিপত্র জারি করে তখন কোটামুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এতদিন সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ৭ সন্তান মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয় নিয়ে। হাইকোর্ট একটা রায় দেয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কোর্টে দ্রুত শুনানি হবে বলেও মনে করেন তিনি।
আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কার চান বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা নিজেরাই যখন তাদের প্রতিনিধি আইনজীবী কোর্টে প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের কথা কোর্ট শুনবে, সরকার পক্ষের কথাও শুনবে। সব পক্ষের কথা শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে, এটাই আমরা আশা করি। ঐ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করবো।
তিনি বলেন, আমরা যে যাই করি জনদুর্ভোগের কারণ যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের সতর্ক মনোযোগ আকর্ষণ করছি। এ নিয়ে আমাদের কারো কোনো প্রকার উসকানিতে যাবো না। আমাদের কেউ যেন উসকানিতে না যায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক ও স্মরণ করে দিচ্ছি।
ছাত্রলীগকে সতর্কভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশনা দিয়ে কাদের বলেন, ‘কোনো অবস্থায় উসকানি দেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নেত্রী নির্দেশ দিয়ে গেছেন তাদের পক্ষ থেকেও উসকানি না দেওয়া হয়।’
চাকারিতে কোটার বিষয়ে আওয়ামী লীগ কি সরকারের পক্ষে, নাকি আদালতের পক্ষে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকার সরকারের পক্ষে, আওয়ামী লীগও সরকারের পক্ষে।’
শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। সেটা খুব বেশি জটিল সমস্যা নয়, সমাধানের অযোগ্য নয়। সেটাও সমাধান অচিরেই হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসার কথা ছিলো, সেটা কবে বসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসবো আমরা কি বলেছি? পরে সাংবাদিকরা শিক্ষকরা বলেছেন এমন উত্তর দিলে তিনি বলেন, এখন তারা কি বললো সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদেরও তো অসুবিধার বিষয় থাকতে পারে। আমরা তাদের প্রতি কোনো প্রকার অসম্মান করছি না। আমরা তাদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো এর সমাধান হয়ে যাবে এটাই আমরা আশা করি।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।