আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ভোট ও ভোটারের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে সকল বৈষম্য দূর করার জন্য, সকল ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার জন্য। এখন যদি পুনরায় বৈষম্য হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা আবার আন্দোলন গড়ে তুলবে। চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব বন্ধ করে জুলুমমুক্ত দেশ চাই।
গণহত্যার বিচার এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলার শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে দেশের মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানের শিক্ষায় রূপান্তর করে যোগ্য, দক্ষ জাতি গঠনে কাজ করতে হবে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও জুলুমবাজি বন্ধ করে সন্ত্রাসমুক্ত, জুলুমমুক্ত দেশ উপহার দিতে হবে। খুনিদের বিচার ও পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
‘রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যেতে হবে। খুনিদের বিচারে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে, যাতে স্বৈরাচারী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৬ বছরের শাসনামলে গুম-খুন, মামলা ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন— দলের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, জাতীয় ওলামা মাশায়েখের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম আবরার, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, মুফতি ইসমাঈল হোসাইন সিরাজী আল-মাদানী।
ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ দীন ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—জেলা কমিটির সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, মাওলানা সুলতান মাহমুদ, ফারুক আহমদ মুন্সি, ওমর ফারুক, হাজী আমান উল্লাহ, নূর হোসাইন, জোবায়ের হোসেন, আশরাফ আলী, মুফতি আব্দুল হাকিম দিফায়ী, রেজাউল করীম, আলতাফ হোসেন প্রমুখ।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, যাদের টাকায় দেশের চাকা সচল, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
নারী অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলাম নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে। নারীদের জন্য কুরআনে বর্ণিত অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে সকল বৈষম্য দূর হবে, নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে।
ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির বলেন, শেখ হাসিনা শুধু মানুষ হত্যাই করেননি, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনসহ দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হত্যা করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। আইন সংশোধন ও অভিজ্ঞ প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ দিয়ে বিচারের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আমলে জনগণ বছরের পর বছর ভোট দিতে পারেনি। অন্যায়ভাবে নিজের ভিটা-বাড়ি হারিয়েছেন অগণিত মানুষ। এর প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতে হবে।
মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী স্বৈরাচার নিজেদের অভিশপ্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষকে বিষিয়ে তুলেছিল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর ছাড়া সবাই ছিল মজলুম আর তারা ছিল জালিম। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, অধিকার হরণ, জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন; এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়াসহ হেন কোনো কাজ নেই, যা তারা করেনি।
হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও পেশীশক্তিমুক্ত প্রশাস গঠন করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা এবং দুর্নীতি করে অবৈধভাবে কামানো ক্ষমতাসীনদের টাকা বাজেয়াপ্ত করতে হবে। দেশপ্রেমিক ইসলামী স্কলার ও আলেমদের সমন্বয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করে নতুনভাবে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজাতে হবে।