পুলিশে নতুন নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, যেহেতু ছাত্র-জনতার সরকার নিরপেক্ষতার সরকার বটে। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারের যে আবরণ, সেই আবরণের নিচে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশসহ অনেক কর্মকর্তা আছেন স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসর। কদিন পরেই পাসিং আউট হবে পুলিশের ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর। যারা পাসিং আউট হওয়ার পরে বিভিন্ন কাজে যোগদান করবেন। এখানে ৮০৩ জন আছেন শুধু সাব ইন্সপেক্টর আর ক্যাডার সার্ভিসের আছেন ৬৩/৬৪ জন, তারা সবাই শেখ হাসিনার আমলের নিয়োগ। এই ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে ২০০ জনই হচ্ছেন গোপালগঞ্জের লোক। তাহলে এখানে কোন নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে? এখানে নিরপেক্ষভাবে কোনও কম্পিটিশন হয়েছে, হয়নি। আরও অনেক ঘটনা আছে যেটা বললাম না।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে এক কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। এই কর্মসূচি একটা সমাবেশে রূপ নেয়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে রুহুল কবির রিজভী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এসএসপি ৬২/৬৩ জন আর ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এরা কারা? কী করে এক জেলার গোপালগঞ্জের ২০০ জন লোক সাব ইন্সপেক্টরে ঢুকতে পারে। আর বাদ বাকি লোক কারা? এরা সব ছাত্রলীগ-যুবলীগ। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বলতে চাই, আবার পুনঃতদন্ত করুন। এই ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এবং এতগুলো এএসপি তারা ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত সাপ হয়ে গোটা বাংলাদেশকে নীল বিষে ভরিয়ে দেবে।
এর আগে, কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতার দাবি করছেন। ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে তো এই সরকার। এই সরকারকে সবাই সমর্থন জানিয়েছে। সেটা আপনার দেখার দরকার নাই? এক জেলার যদি ২০০ জন সাব ইন্সপেক্টর হয়, তাহলে এখানে কী পরিমাণ জালিয়াতি করেছেন শেখ হাসিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই যে কোটা আন্দোলন করল ছাত্ররা, আত্মাহুতি দিলো, শার্টের বোতাম খুলে শেখ হাসিনার র্যাবের সামনে তারা দাঁড়িয়ে বুলেট বরণ করেছে। একজন মারা গেছে, তার পাশে আরেকজন দাঁড়িয়ে বলেছে আমাকে মারো। এই যে আত্মদান, এই যে নিজের জীবন দিয়ে একটা মহান গণতন্ত্রের শুভ সূচনার যে বার্তা, সেই রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, এই বেইমানি তো মানুষ মেনে নেবে না। এটা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেখা দরকার। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদকে বিস্তার করার জন্য যাতে আর কেউ টু শব্দ করতে না পারে সেজন্য তারা পুলিশ প্রশাসন তৈরি করেছে। এজন্য তারা র্যাব তৈরি করেছিল, তার নমুনা হচ্ছে এইটা।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা গোটা বাংলাদেশকে যেন গণকবরে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনার সেই গণকবরে আর এ দেশের জনগণ যেতে চায় না।
সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলছি, এখনো মার্কেট সিন্ডিকেট যারা করে আছে তাদেরকে কেন ধরছেন না? কেন পেঁয়াজের দাম বাড়বে, কেন কাঁচামরিচের দাম বাড়বে, কেন সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে, কেন সব কিছুর দাম বাড়বে? আপনাদের তো জনগণের কাছ থেকে শুভেচ্ছা দেওয়া হয়েছে, সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে কেন দাম বাড়বে? সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে জনগণকে স্বস্তি দিন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক নেতা আক্তার হোসেন, আনুয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মোস্তফা জামান, আনোয়ার হোসেন, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, এস এম জাহাঙ্গীর, জাসাসের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, উত্তর যুবদলের সাজ্জাদুল মিরাজ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফুর রহমান তুষার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি ডা. আউয়ালসহ উত্তরের সাতটি থানা ও সব ওয়ার্ডের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।