রাজনীতি

হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জামায়া‌তের

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানি‌য়ে‌ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

রোববার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কে‌ন্দ্রে ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহিদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

জামায়া‌ত আমির ব‌লেন, জুলাই-আগস্টের শহিদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। ২০০৬ সালের মাস্টারমাইন্ডদের তাণ্ডবে এ দেশ পথ হারিয়েছিল। মানুষরূপী বর্বর পশুদের জন্য সেদিনের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাভাবিক। তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে। কোনও শাসক নিজেকে দেশের মালিক মনে করলে, তারা জালিম হন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত কর‌তে হ‌বে।

তিনি বলেন, শহিদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তাদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মো. আব্দুর রব, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মো. মোবারক হোসাইনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, ২৮ অক্টোবর ছিল ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম মহড়া। আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে, তবুও পরাজয় মেনে নেয়নি। ৫ আগস্ট যে পরিবর্তন হয়েছে, এটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাব।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহিদরা মরে না বরং তারা সব সময় জীবিত। আমাদের ‘আগস্ট বিপ্লবের’ শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন। 

তিনি পতিত ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, জাগপা মুখপাত্র ও সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের প্রমুখ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি। গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কি না, সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে। জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করতে পারবে কি না। সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। যাতে কোনো রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকট না হয় এবং ফ্যাসিবাদ যে কোনো সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের সন্তান আলী আহমাদ মাবরুর, শহিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সন্তান মাসুদ সাঈদী, জুলাই বিপ্লবের শহিদ ফারহানুল ইসলামের পিতা এবং শহিদ আসাদের স্ত্রীসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

সভায় কূটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী জুলুমের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণকারীদের পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য এবং অর্ধ-সহস্রাধিক আহত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।