আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপি নেতাদের যে ব্যস্ততা শুরু হয়, ক্রমেই তা গতি পাচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের শীর্ষনেতারা প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এসব কর্মসূচিতে নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ ও তারিখ’ ঘোষণার তাগিদ দিচ্ছেন তারা- বারবার প্রশ্ন তুলছেন কবে নির্বাচন?
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে শীর্ষ নেতাদের মুখে শোনা গেছে প্রায় অভিন্ন সুর। নতুন করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিদেশিরাও জানতে চাচ্ছেন নির্বাচন হচ্ছে কবে।
দেশি–বিদেশি অংশীজন সবার একই প্রশ্ন, নির্বাচন কবে: খসরু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের সাক্ষাতের সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সাক্ষাতের সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তাদের বৈঠক চলে প্রায় এক ঘণ্টা।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘‘সবাই জানতে চাচ্ছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ কী, কবে নির্বাচন হবে? দেশি-বিদেশি স্টেকহোল্ডাররা (অংশীজন) সবাই তো অপেক্ষা করছে। আমরা আশা করি, সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সফল হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে তারা যত দ্রুত সম্ভব এগিয়ে যাবে। আগামী দিনে সেটাই প্রত্যাশা থাকবে।’’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিষয়ে সবার একই প্রশ্ন, নির্বাচন কবে? সেই প্রশ্নের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সব সময় বলি যে যারা স্টেকহোল্ডার আছে, তারা অপেক্ষা করছে একটি নির্বাচিত সরকার আসার পরে তাদের সিদ্ধান্তগুলো তারা নেবে। তাদেরও (তুরস্ক) সেই আগ্রহ আছে। তারা জানতে চাচ্ছে, কবে নির্বাচন হবে।’’
তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করব। এ ব্যাপারে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য তুরস্কসহ আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করার চিন্তা আছে।’’
আমীর খসরু বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা তুরস্কের ভাষার বিষয়ে কাজ করছে। আগামী দিনে সাংস্কৃতিক সেন্টার করার ভাবনা তাদের আছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ১.২ বিলিয়নের মতো ব্যবসা হচ্ছে। এটাকে আমরা সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ জন্য আমাদের দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক এবং ব্যবসার সম্পর্ক কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেটা আলোচনা হয়েছে।’’
দেশে ‘মাফিয়া লীগের’ পুনরাবৃত্তি যেন না হয়: রিজভী দেশে ‘মাফিয়া লীগের’ পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয় সে ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর লুট-হরিলুটের মাফিয়া লীগ তৈরি করেছিলেন হাসিনা। বিএনপির যেসব নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের বলবো- তারা যেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আচরণের পুনরাবৃত্তি না ঘটান।”
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে নাটোর শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপি অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে রিজভী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে মারধরে আহত আওয়ামী লীগ কর্মী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি উজ্জ্বলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। অভিযোগ উঠেছে, গত বুধবার দুপুরে কালিকাপুর গ্রামে উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে মারধর করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে উজ্জ্বলকে পুলিশে সোপর্দ করেন তারা। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা দিয়ে উজ্জ্বলকে আদালতে পাঠায়। সেদিনই আদালত উজ্জ্বলকে জামিন দেন। উজ্জ্বলকে মারধরের ঘটনায় সে সময় ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
উজ্জ্জ্বলকে মারধরের প্রসঙ্গ রিজভী বলেন, “আমি বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে বলেছি, এ ঘটনার সঙ্গে যে জড়িত তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। আজকের মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা দিতেও বলেছি। একজন ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আঘাত করা বেআইনি কাজ। এটা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। বিএনপি এটা করে না। সারা দেশে বিএনপির নামে, বিএনপির নামধারী ব্যক্তিরা এসব কাজ করছে। এসব কাজের জন্য ছাত্রদল ও যুবদলসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের বহু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে পদ থেকে শোকজ ও অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্র মানেই পরস্পর সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা বোধ। একে অন্যের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে, তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার থাকতে হবে। সেজন্য বিএনপি দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ থেকে কখনো বিতাড়িত করা যায়নি। তিনি বারবার বলেছেন, আমার ঠিকানা বাংলাদেশের মাটি। শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। তারা নানাভাবে তাকে (খালেদা জিয়া) শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করেছেন।”
এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ অর্থবিষয়ক সম্পাদক মামুন আহমেদ সুমন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজসহ বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমা না চেয়ে থ্রেট দিচ্ছে: এ্যানী বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাভাবিক পরিবেশ পেয়েছি। সজাগ ও সতর্ক না থাকলে হায়নারা আবারো আমাদের এই পরিবেশকে বিনষ্ট করতে পারে। কারণ বিভিন্নভাবে তারা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পুরনো মিছিলের ছবি-ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাশ্ববর্তী দেশে বসে বলছে, ‘যেকোন সময় চলে আসবো’। এখন পর্যন্ত এরা (আওয়ামী লীগ) জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং তারা আমাদের থ্রেট করছে, ধমক দিচ্ছে।”
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা আউটার স্টেডিয়ামে তাঁতবস্ত্র দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ্যানী বলেন, “তারা থ্রেট পুরো জাতিকে, পুরো বাংলাদেশের জনগণকে করছে। আমাদের টার্গেট হল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পোঁছাতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশটাকে আমরা সুন্দর দেশ হিসেবে দেখতে চাই।”
বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে মেধার ভিত্তিতে আপনাদের চাকরির জায়গা খুঁজতে হবে। আপনারা মেধার জন্য আন্দোলন করেছেন। আমার কাছে অনেক তদবির আসে, বিভিন্ন চাকরির জন্য। চাকরিতো আপনি করবেন, মেধার ভিত্তিতে আপনাকে আসতে হবে। সুতরাং আমার মনে হয়, তদবির কমিয়ে কীভাবে মেধার প্রতিযোগিতায় সেখানে যেতে পারেন সেই চেষ্টা আপনারা করবেন। কারণ মেধার জন্য আপনারা সংগ্রাম ও লড়াই করেছেন।”