‘‘মাত্র তিন মাস আগেও যেসকল ছাত্র একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে, ঢাল হয়ে একে অপরের জীবন রক্ষা করেছে, তারা কেন আজ হিংসা হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত ঝরাচ্ছে? কেন রাজপথে নেমে প্রতিদিন সহিংস আন্দোলন করতে হচ্ছে অধিকার বঞ্চিতদের? আন্দোলনের মিত্রদের কণ্ঠে কেন এত তাড়াতাড়ি অনৈক্য ও বিভক্তির সূর।’’
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তুলে ধরেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেন, ‘‘হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষের ঐক্য রক্ষার ব্যাপারে শুরু থেকেই উদাসীন। দ্রব্যমূল্যরে ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্বেগ তারা আমলে নিচ্ছেন না। আহত সংগ্রামীরাসহ প্রতিদিন রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভালো সমন্বয় টিম তৈরি করে এসব আন্দোলন ও দাবি দাওয়া টেবিলে বসেই সমাধান করা যেত। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখল দারিত্বের যে অভিযোগ তার কোনো সঠিক সুরাহা হচ্ছে না।’’
তুচ্ছ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। অহিংস গণঅভ্যুত্থানের জনসমাগমের বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝিও সরকার আগাম ব্যবস্থা নিলে সমাধান করা যেতো। কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার অতীত ভূমিকা নিয়ে সংক্ষুব্ধদের বিষয়টিকেও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব হতো।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরের চরম নৈরাজ্যবাদী শাসনের অবসানের পর দেশবাসী আশা করেছিলেন, সব জায়গায় ধীরে ধীরে শান্তি ফিরবে। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে, সরকার সে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো আগাম পদক্ষেপ নিতে পারছে না বরং কখনও কখনও নিজের মিত্র শক্তিদের দূরে সরিয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর বলে দায় এড়াতে চাচ্ছে।’’
গত কয়েক মাসের সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্থিরতা ও গণ অভ্যুত্থানের মিত্রদের বিভক্তির দায় অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার ও দেশবাসীর উদ্বেগ দূর করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনাকর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও শান্তি রক্ষায় করণীয় প্রসঙ্গে এবি পার্টি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
তিনি বলেন, ‘‘কোনো কোনো দলের নরম সুর-ভেজা কোমল দরদ মাখা মায়াবী বক্তব্য আমাদের হতাশ করে। এগুলো আমরা নিতে পারি না। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এটা ছিল না যে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা যে বিগত ষোল বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠ নির্বাচন দেয়নি তাকেই নির্বাচনে আনতে হবে। এখন দেশে যে অরাজকতা চলছে তা সব পতিত সরকারের দুষ্কর্ম। বিশেষ রাজনৈতিক দলের সুশীলতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব ভেঙে শেষ করে ফেলছে। ছাত্র নামধারী এরা কারা? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এসব যখন হয় তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের দায়িত্ব নিয়েই সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে যা করণীয় তাই আপনারা করবেন।’’
এতে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির আহ্বায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা রাজিয়া, শাহিনুর আক্তার শীলা, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।