রাজনীতি

শক্ত হাতে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন

শক্ত হাতে দেশের ঘোলাটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসরেরা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।’’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘অবৈধ ক্ষমতা আর অবৈধ সুবিধা হারানো পলাতক স্বৈরাচারের দোসরেরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।’’

গত কয়েক দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে।’’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনতার আন্দোলনে যেই শিক্ষার্থীরা সামনের কাতারে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছিল, হঠাৎ করেই এখন তারা কেন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠল? জনমনে এই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার এমন একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরিয়ে দেবে? এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই।’’

পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কেউ ‘স্যাবোটাজ’ করছে কি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে হবে।’’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কি না, সরকারকে এ বিষয়টিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।’’

পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবে ‘করণীয় নির্ধারণই’ হোক সরকারের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখা দরকার, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের কোটি কোটি পরিবারকে প্রতিদিন সাধ ও সাধ্যের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। পারিবারিক খরচ মেটাতে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে অনেকের কাছেই ‘সংস্কারের চেয়ে সংসার’ অগ্রাধিকার হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।’’

বাজার নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এই স্পর্শকাতর ইস্যু ব্যবহার করার সুযোগ নিতে পারে, এমনটা মনে করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও তারেক রহমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জনগণকে আস্থায় রাখা ও জনগণের আস্থায় থাকার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথা যেন ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।’’

জনগণের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি এবং পলাতক স্বৈরাচার যাতে গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্যচ্যুত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের চলমান পরিস্থিতি সরকারকে আরেকটু সময় দেওয়া ও আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শান্ত থাকুন। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখুন।’’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে, এমন হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তারেক রহমান।