রাজনীতি

হঠকারিতা করে ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে ফখরুলের আহ্বান

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে ধৈর্য ধরতে এবং হঠকারিতা করে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘আজকে বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটা বাস্তবায়িত করতে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। হঠকারিতা করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল পদক্ষেপ করে আমরা যেন সেই স্বপ্নকে বিনষ্ট না করি। সেই বিষয়টা আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।”

‘‘হ্যাঁ, দেশের অবস্থা…অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুব ভালো না। রাজনৈতিক দিক দিয়ে ভঙ্গুর অবস্থা হয়ে আছে। আমরা সেটাকে একসাথে করতে চাই। আমরা সেটাকে একসাথে নিয়ে সবাই মিলে এই সমস্যার সমাধান করতে চাই। সবাই মিলে একসাথে হয়ে আমরা দানবকে ফ্যাসিস্টকে সরাতে পেরেছি, তাহলে এটা কেন পারবো না? সত্যিকার অর্থে নতুন সম্ভাবনার একটা নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করি।”

‘কিছু মানুষ ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখানে আমাদের কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের কিছু মানুষ তারা আজকে বিভিন্নভাবে এই ঐক্যে তারা কিছু ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানি, সেই চেষ্টা সফল হবে না। আমরা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আজকে একটা পরিবেশ এসেছে। আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখছি, কথা বলছি। আমরা যেন এই পরিবেশটা, এই স্বপ্নটা নষ্ট করে না দিই।”

‘‘আমাদের এখন যেটা প্রয়োজন, আমরা যেন আমাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকি। আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই। বৈষম্য দূর করতে চাই। বাংলাদেশে তরুণদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।”

‘দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হয়ে যাবে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, আবারো বলছি, সংস্কার চাই। কিছু মানুষ আছেন, যারা একটি ভুল বুঝানোর চেষ্টা করেন; আমরা সংস্কারের আগে নির্বাচন চাই…নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছি… বিষয়টা কিন্তু সেটা না।”

‘‘এটা বুঝতে হবে… আমরা যে বলছি যে, নির্বাচনটা কেন দ্রুত চাই? এ কারণে দ্রুত চাই, নির্বাচন হলে আমাদের যে শক্তি, সেটা হবে বৃহৎ। যে সরকার থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে অনেক কিছু শক্তিশালী হবে। যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো দূর হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ কথাও বলেছি, নির্বাচনের পরে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার করতে চাই। সবাই মিলে রাষ্ট্রের সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। যারা আমাদের দলে আছে, অন্যান্য যেসব দল আছে, তারা এটা ভাববেন, চিন্তা করবেন।’’

‘‘আমি বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি… সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। এই সমর্থনে তাদের পক্ষেই সম্ভব হবে, আমরা একটা পথ খুঁজে পাব। নির্বাচনে মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির প্রথম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলে এবি পার্টির জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মাণ করা প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিপ্লবে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আহত ছাত্ররাও অংশ নেন।

কাউন্সিলে ভোটে নির্বাচিত এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামানসহ নির্বাহী কমিটির নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণায় নতুন নেতৃত্বকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান মির্জা ফখরুল।

২০২০ সালের ২ মে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে এবি পার্টির যাত্রা শুরু হয়।

এবি পার্টির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় জাতীয় কাউন্সিলে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, খেলাফত মজলিশের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী আকন্দ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, এনডিএমের ববি হাজ্জাজসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।