ধানের জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর জেলা। দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে এখানে। জেলার ১৩টি উপজেলায় আমন ধান রোপণ করেছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ২ লাখ ৬০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষার শুরুতেই অনেক চাষি জমি তৈরি করে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। এখনও অনেক জমিতে চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে যারা বর্ষার শুরু থেকে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন, তাদের প্রায় জমির ধানগাছ বড় হয়ে গেছে। তারা ধানা জমিতে ফসল ভালো ফলনের জন্য ইউরিয়া সার ছিটাচ্ছেন। আবার প্রায় জমিতে পোকামাকড় মারতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ গাছগুলো আর তার সাথে দুলছে আমন চাষিদের স্বপ্ন। ১০০ দিনের মাথায় কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসল কাটা-মাড়াই করে ঘরে তুলবেন।
গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা আমন ধান রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বোরো ধান ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা বাজার দর পেয়েছেন তারা।
হিলির জালালপুরের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, হারা ইরি ধানের দাম ভালোই পাইছিনু। নিজেরসহ বর্গা দিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিত মুই আবাদ কোরু (করি)। এবারও বেবাগ (সব) জমিত আমন ধান লাগাইছু। ইউরিয়া সার আর কীটনাশক ছিটাইছু। সব জমির ধান ভালোই হয়েছ। আল্লাহ দিলে আমন ধান ভালো হবি (হবে), ছোলপল (ছেলে-মেয়েদের) নিয়ে সুখে থাকমু।
বিরামপুরের কেটরা গ্রামের বাদল মিয়া বলেন, ইরি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। গেলো মৌসুমে ইরি ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবার আমন ধান ১২ বিঘাতে লাগাচ্ছি। তবে এখনো বিঘা তিনেক জমিতে চারা রোপণ করা বাকি আছে। আমন ধান চাষ করতে তেমন খরচ হয় না। কেননা, বোরো মৌসুমে জমিতে যে সার প্রয়োগ করা হয়। তাতে আমন মৌসুমে তেমন সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না, আবার পানির জন্য বাড়তি খরচ হয় না। আশা করছি আমন ধানও ভালো পাবো।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সোন চন্দ্র পাল জানান, বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলায় আমন ধানের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার উপজেলায় ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন ধান চাষ করছেন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহো রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমি। এখনো অনেক জমিতে চারা রোপণের বাকি আছে। জমিতে চারা রোপণের যথেষ্ট বর্ষার পানি আছে। প্রতিটি উপজেলায় কৃষি অফিসার ও কর্মীরা কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে আশানুরূপ ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে।