মাত্র ১৬ শতাংশ জলায়াতনে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাছারীবাড়ি এলাকার পলাশ চন্দ্র ঢালী।
৪ মাসের ব্যবধানে একদিনে সাড়ে ১৮ মণ চিংড়ি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা লাভ করেছেন তিনি। তার এ সাফল্যে এলাকার অন্য চাষিদের মধ্যে দারুণ সাড়া পড়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনাবান্দা গ্রামের গোপাল চন্দ্র ঢালীন দরিদ্র সন্তান পলাশ দীর্ঘদিন ধরে শশুরবাড়ি বটিয়াঘাটা উপজেলার খলশীবুনিয়া গ্রামে বসবাস করেন। সেখানে কাছারীবাড়ি রাস্তার পাশে মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। কিন্তু এলাকার অনেক চাষি উন্নতমানের চাষ করে ব্যাপক চিংড়ি উৎপাদন করছে, দেখে পলাশ ঢালী ২০২০ সালে ওই জমিতে খাদ্য কোম্পানি সিপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের পরামর্শেই ১৬ শতাংশ জমিতে ৪ ফুট গভীর করে মাটি তুলে পাড় তৈরি করেন। এবং বৈদ্যুতিক মোটর বসিয়ে অক্সিজেন তৈরি ও ঘেরের পাড় ঘিরে দেওয়াসহ জৈব নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেন। এরপর সিপি কোম্পানির পরামর্শে নদী থেকে লবণ পানি তুলে ব্লিচিং পাউডার, পটাশ দিয়ে মাছ ছাড়ার উপযোগী করে তোলেন। পরে ২০ হাজার পোনা ছাড়া থেকে ৪ মাস ধরে দিনে ৪ বার খাবার দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পরিচর্যা করেন। এতে তার সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে দামের ৪৪ বস্তা খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি চুন, ওষুধ ও শ্রমিক খরচ মিলে তার ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। পলাশ ঢালী গত ১৮ আগস্ট (৩ ভাদ্র ) জাল দিয়ে বাগদা চিংড়ি ধরে তার ঘেরে বসেই ৩৮ হাজার টাকা মণ দরে সাড়ে ১৮ মণ মাছ বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা আয় করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সফল বাগদা চাষি পলাশ চন্দ্র ঢালী বলেন, ‘আমি সিপি কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় বাগদা চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। আমি ও আমার ছেলে ভবোতোষ ঢালী গত ৪ মাস ধরে মাছের পরিচর্যা করেছি। ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে একদিনে ৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। ১৮ আগস্ট মাছ বিক্রি করার পর গত ২১ আগস্ট ওই ঘেরে আবারও নতুন করে রেনুপোনা ছেড়েছি। কোম্পানির পরামর্শে ঠিকমতো মাছের পরিচর্যা করতে পারলে অনেক লাভ। তবে ঝুঁকিও আছে।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এমডি মনিরুল মামুন বলেন, ‘বটিয়াঘাটা উপজেলাঞ্চলে এই আধা-নিবিড় পদ্ধতির বাগদা চিংড়ি চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে। উৎপাদন দেখে এলাকার চাষিরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এ পর্যন্ত ১১০টি ঘেরে এই পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করছে। আর থাইল্যান্ডের সিপি কোম্পানির মাছের খাবারের সাফল্য দেখে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে।’
মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন প্রকল্পের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি বলেন, ‘আধা-নিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষে অনেক লাভ। কিন্তু বায়ো সিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে না পারলে অনেক ঝুঁকি আছে।