রকি খান। দিনাজপুরের হিলির অনার্স পড়ুয়া ছাত্র। শখের বসে বিদেশি পাখি পালন শুরু করেছিলেন। একসময় শখ পেশায় পরিণত হয়। বর্তমানে তিনি পাখি পালনে স্বাবলম্বী। এবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উন্নয়ন মেলায় রকি প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন।
৬ বছর আগে দুই জোড়া বিদেশি পাখি দিয়ে শুরু করেন পাখি পালন। শখ পূরণের পাশাপাশি তিনি একজন পাখি ব্যবসায়ী হয়ে যান। লেখাপড়ার সাথে বিদেশি একটি পাখির খামারও তৈরি করে ফেলেন। সেইসঙ্গে হিলি বাজারে একটি পাখির দোকান দেন রকি। দূর-দূরান্ত থেকে তার দোকানে পাখি কিনতে আসেন ক্রেতারা।
রকির খামার এবং দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ১২ প্রজাতির বিদেশি ৬০ জোড়া পাখি আছে। এসবের পাশাপাশি বাড়িতে ২৫০ থেকে ৩০০টি দেশি কোয়েল পাখি রয়েছ। এ থেকে প্রতিদিন ২০০টি ডিম পান তিনি। প্রতিটি ডিম দুই টাকা দরে বিক্রি করেন রকি। তা থেকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা আয় আসে তার। প্রতিদিন পাখির পেছনে ব্যয় হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
হিলি বাজারে রকির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ১২ প্রকার বিদেশি পাখি। বাজারিকা প্রতি জোড়ার মূল্য ৫০০ টাকা, প্রিন্সপাখি, যার মূল্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, খোকাটেল মূল্য ৫০০০ এবং বুড়ানির মূল্য ১০,০০০ টাকা, লাবাট্রির মূল্য ৫০০০ টাকা জোড়া, লাভাপাখি ৩০০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘুর মূল্য ১৫০০ টাকা, ডায়মন্ড ডাভের মূল্য ২০০০ টাকা জোড়া ও দেশি কোয়েলের দাম ১০০ টাকা। এসব পাখিকে খাওয়ানো হয় কাউনের চাল, ধান, চিনি, সূর্যমুখী ফুলের বিজ, ক্যানাবি, মিলেট, বুজিটিল জাতীয় খাবার।
রকি খান এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। করোনা মহামরিতে কলেজ বন্ধ থাকলেও তার সময় বেশ ভালো কেটেছে। কেননা, তার রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখি। সময়গুলো তার ব্যস্ততা ও আনন্দের মাঝে কেটেছে।
রকির বাবা হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, শখের বসে আমার ছেলে দুই জোড়া বিদেশি পাখি সংগ্রহ করে। উদ্দেশ্য ছিল তা দিয়ে পাখি পালনের শখ পূরণ করবে। পরে তা থেকে অনেক বাচ্চা ফোটে এবং সে তা বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়। তারপর থেকে রকি বিভিন্ন স্থান থেকে এসব পাখি জোগার করে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন।
রকি বলেন, শখ থেকে ব্যবসা শুরু আমার। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদেশি পাখির খামার তৈরি করেছি। হিলি বাজারে তা বেচাবিক্রির জন্য একটি দোকানও দিয়েছি। প্রতিদিন এই পাখি থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারকে সহযোগিতাসহ লেখাপড়া করেও ভালো চলছি। হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে আমাকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাখিদের শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা আমার খামারে আসেন এবং চিকিৎসা দিয়ে যান।
এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সেলিম শেখ বলেন, রকির বিদেশি পাখির খামারের প্রতি আমরা সবসময় লক্ষ রাখি। পাখিদের যে কোনো সমস্যা হলে আমাদের কর্মীরা তার খামারে গিয়ে দেখভাল করেন। তার খামারে প্রায় ১২ প্রজাতি বিদেশি পাখি রয়েছে। সে একজন ছাত্র হয়ে পাখি পালনে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, এটা একটা ভালো উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর হাকিমপুর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উন্নয়ন মেলা হয়। এই মেলায় রকির বিদেশি পাখির খামারকে প্রথম করে, প্রথম পুরস্কারটি তার হাতে তুলে দেওয়া হয়।