পজিটিভ বাংলাদেশ

ইউরোপ-আমেরিকাতে যাচ্ছে দিনাজপুরের পুতুল

মোয়াজ্জেম হোসেন মিজু। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। পুতুল বানানোর কোম্পানির মালিক। তার কোম্পানির পুতুল দেশ পেরিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ১৫ বছর আগে মাত্র তিনজন শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন কোম্পানি। বিদেশে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে প্রায় ৫০০ নারী শ্রমিক কাজ করছেন তার কোম্পানিতে। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয় নারীরা।

উপজেলার দক্ষিণ আব্দুলপুর বানিয়ালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিতাই মেকারের স্ত্রী অনিতা রায় তার নিজ বাড়িতে গ্রামের নারী শ্রমিক দিয়ে পুতুল তৈরির কাজ করাচ্ছেন। শ্রমিকরা সারিবদ্ধ ও গোলাকার হয়ে আপন মনে কাজ করছেন। আবার অনেকেই নিজ বাড়িতে পুতুল তৈরির রুলসুতা আর তুলা নিয়ে পুতুল তৈরি করছেন। সংসার-সন্তান সামলিয়ে কাজ করেন তারা। অনিতা রায় কোম্পানির সুপার ভাইজার, আব্দুলপুরসহ পাশের গ্রামে পুতুল তৈরির দুইটি শাখা রয়েছে। এই শাখা দুটিতে স্থানীয় নারী শ্রমিকরা পুতুল তৈরির কাজ করেন।

স্থানীয় কর্মজীবী নারীদের পাশাপাশি অনেক স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীরাও রয়েছেন। করোনায় সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল, আর বন্ধে তারা এই পুতুল বানিয়ে সময় কাটানোর পাশাপাশি টাকাও ইনকাম করেছেন।

স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী দীপালী রায় বলেন, গত দেড় বছর যাবত করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। ওই বন্ধে আমি পুতুল বানানোর কাজ করেছি। ভালো অর্থও উপার্জন হয়েছে। বাবাকে আর্থিক সহযোগিতাসহ নিজেরও অর্থের চাহিদা পূরণ করেছি।  এখন স্কুল খুলেছে, তবে পাশাপাশি এই কাজ করে যাচ্ছি।

নারী শ্রমিক চাঁদনী রায় বলেন, প্রতিদিন আমি সংসারের সব কাজ করে পুতুল বানানোর কাজ করে থাকি। এই কাজ করে আমরা স্বাবলম্বী হচ্ছি। সংসারে স্বামীকে সহযোগিতা করছি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এবং নিজের হাত খরচ করতে পারছি।

শ্রমিক তৃপ্তি অধিকারী বলেন, আমি এখানে দীর্ঘ দিন ধরে পুতুল বানানোর কাজ করে আসছি। এতে আমার অনেক উপকার হয়ে থাকে, আমরা অনেকেই এই উপার্জন থেকে গরু, ছাগল এবং মুরগি পালন করে আসছি। আমাদের আর কোনো অভাব নেই।

সুপার ভাইজার অনিতা বলেন, এই গ্রামে আমার দুইটা পয়েন্টে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের কোনো চাপ দেওয়া হয় না। বর্তমানে পুতুল বানানোর কাজ করে আর্থিক দিক দিয়ে এলাকার নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এই কোম্পানির মালকি মিজু ভাই আমাদের সামনে চলার রাস্তা দেখিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা কাজ পাচ্ছি এবং গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

পুতুল বানানো কোম্পানির মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন মিজু রাইজিংবিডিকে বলেন, ঢাকায় আমার পার্টনার আছে, তাদের মাধ্যমে আমি এই পুতুলগুলো আমেরিকা এবং ইউরোপ উপমহাদেশে রপ্তানি করে আসছি। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ওসব দেশের অর্ডার বেশি পেয়ে থাকি। তিনজন শ্রমিক নিয়ে প্রথম আমার পুতুল বানানোর কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। এসব শ্রমিকদের আমরা প্রথমে ঢাকায় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বর্তমানে ৫০০ শ্রমিক আমার সঙ্গে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে এই পুতুল তৈরির কাজ হয়ে থাকে। তবে আব্দুলপুর ইউনিয়নে বেশি। এখানে নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন। পুতুল কোম্পানিটি একটি ভালো উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এছাড়াও এখানে অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।