জাবিদ আল মামুন (২৭)। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা গ্রামের বাসিন্দা। স্বপ্ন দেখেছিলেন ত্বিন ফল চাষ করে সফল হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তা জাবিদ আল মামুন একই গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি করটিয়া সরকারি সা'দত কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ জমির মধ্যে ত্বিন ফলের আবাদ করেছেন। দেখতে আকারে দেশীয় ডুমুরের মতো। বাগানের চারপাশে নেট দিয়েছেন। যাতে কোনো পশুপাখি বাগানের ভেতরে ঢুকে গাছ ও ফল নষ্ট করতে না পারে। ছোট-বড় সব গাছেই ফল ধরেছে। অনেক গাছেই ফল পাকতে শুরু করছে। প্রথমবারের মতো গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। ইতোমধ্যে উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
জাবিদ আল মামুন বলেন, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে করটিয়া সরকারি সা'দত কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করি। চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসেছিলাম বাড়িতে। করোনাকালীন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। তখন অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই। চিন্তা করি চাকরি না করে কী করা যায়। তখন আমি ইউটিউবে দেখি কুরআনে বর্ণিত ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। খোঁজ নেই কোথায় চাষ হচ্ছে বা পাওয়া যায়। পরে জানতে পারি গাজীপুরে চাষ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ফলের বিষয়ে কর্মশালায় যােগদান করি গাজীপুরের শ্রীপুরে। প্রশিক্ষণ শেষ করে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০০ চারা কিনে বাড়ির পাশে ৩৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করি। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয়েছে ৫২০ টাকা। প্রথমে কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম। পরে কঠোর পরিশ্রম, নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে সফল হয়েছি।
দুই মাসের মধ্যে গাছে ত্বিন ফল আসতে শুরু করে। ৬ মাসের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু করি। এবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ত্বিন ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি কেজি ফল বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা করে। এবছর একটি গাছ থেকে ৩-৪ কেজি ফল পাবো। আশা করছি দ্বিতীয় বছর ৭-১০ কেজি ফল আসবে। তিন বছর পর থেকে একটি গাছ ২০-২৫ কেজি ফলন দেবে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টানা ৩৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বিন গাছ।
আকারে দেশীয় ডুমুরগুলোর চেয়ে বেশ বড় হয়। পাকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়। আঁটি ও বিচিহীন ফলটি আবরণসহ খাওয়া যায়। এ পর্যন্ত ৫০-৬০ কেজি ফল তুলতে পেরেছি। বিক্রি করা হয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। আশা করছি এবছর ৯-১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। এ ছাড়াও, ৪-৫ লাখ টাকার কলম চারা বিক্রি করতে পারবো। প্রতিনিয়ত একজন কর্মচারী ত্বিন গাছ পরিচর্যার জন্য রাখা হয়েছে।
ফল চাষি নুরে আলম বলেন, জাবিদের পরামর্শ নিয়ে আমিও ১৮ শতাংশ জমিতে ২০০ ত্বিন ফলের চারা রোপণ করেছি।গাছে ফল এসেছে। পাকতেও শুরু করেছে। বিক্রি করতে পারবো। আশা করছি, আমিও লাভবান হবো।
স্থানীয় কৃষক হাজী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, জাবিদ যখন ত্বিন ফলের বাগান করলো, তখন আমার মনে আশা জাগে। পরে জাবিদের কাছ থেকে তিনটি ফলের চারা বাড়িতে নিয়ে টবের মধ্যে রোপণ করি। আমার গাছেও ফল এসেছে। সামনে এই ফলের চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সখীপুর উপজেলায় ত্বিন ফল নতুন সংযোজন হয়েছে। এ উপজেলা ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মালটা, কলা, কুলসহ অন্যান্য ফসল ও ফল চাষ হচ্ছে। সখীপুরে ত্বিন চাষে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একজন কৃষক ৩৫ শতাংশ জমিতে ফল চাষ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে তিনি ভালো ফলন পাবেন। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ত্বিন ফলের জমিতে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তাকে দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন ত্বিন ফল চাষে।