আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা রংপুর। চলতি বছর এ জেলার পীরগাছা উপজেলায় ফসলটির বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠের হাসি ছড়িয়ে পড়েছে হাটেও। গত দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা।
রংপুর বিভাগীয় কৃষি অফিসের জরিপ থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল থেকে বিদেশে আলু রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে পীরগাছা। এ বছর প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পীরগাছায় চলতি বছর ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি হবে। মানসম্পন্ন এই আলু উৎপাদনে ২০০ কৃষককে প্রশিক্ষিত করে রপ্তানি যোগ্য আলু উৎপাদনে সহায়তা করেছে কৃষি বিভাগসহ বিএডিসি।
২০২০-২১ অর্থবছরে পীরগাছায় ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ২৩৯ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। ২০২০ সালে ৪২৫ মেট্রিক টন এবং ২০২১ সালে ৬৫০ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল।
উপজেলা থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে আলু রপ্তানিতে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারেও দাম বেশ ভালো। জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকেরা, যা গত বছর ৭ থেকে ৮ টাকা ছিল।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) কথা হয় উপজেলার পারুল ছিদাম বাজার এলাকার কৃষক জিল্লালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার পাঁচ হেক্টর জমিতে রপ্তানিযোগ্য আলু চাষ করেছি। একরে প্রায় ৩০০ মণ আলু উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর ২৮ মেট্রিক টন আলু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসোয়ারা এগ্রোর কাছে বিক্রি করেছি।’
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, 'পীরগাছায় রপ্তানিযোগ্য আলুর চাষ দিন দিন বাড়ছে। আগামী বছর এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এখন থেকে আমাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিযোগ্য আলু চাষাবাদ করতে হবে। এ জন্য কান্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক কলাকৌশল বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম পেয়ে কৃষকেরা বেশ খুশি। আমরাও চাই কৃষকেরা যেন আলু চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারেন।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকমল হোসেন জানান, 'চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় রেকর্ড ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। যা গতবারের চাষাবাদের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। এবার আমরা উন্নত জাতের বীজ সরবারহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে বিদেশে আলু রপ্তানি শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। এখন যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আলু কেনার চাহিদা বাড়ছে, তাতে করে রংপুর থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি যাবে।'