১০ একর জায়গায় চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। বাম্পার ফলনে বর্তমানে এসব গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ফুল। চারদিকে তাকালে দেখা যায় শুধু হলুদের সমারোহ। আবার এসব ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত ভ্রমর। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৬ লেন সংলগ্ন পশ্চিম রজপাড়া গ্রামের এ মনভোলানো দৃশ্য দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন শত শত দর্শনার্থী।
আগত এসব দর্শনার্থী ছবি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেউবা আবার তৈরি করছেন টিকটকের ভিডিও। শুধু পশ্চিম রজপাড়াই নয়, জেলার সব সূর্যমূখী ফুলের ক্ষেতেই হয়েছে বাম্পার ফলন। ফলে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় ৭৭৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার সবচেয়ে বড় সূর্যমুখীর ক্ষেত এটি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে হাইসান জাতের বীজ সংগ্রহ করে ১০ জন কৃষক এখানে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। বর্তমানে এ ক্ষেতে ভালো ফলন হওয়ায় নতুন করে সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক কৃষক।
ধানখালী থেকে আসা রবিউল ইসলাম জানান, তিনি পটুয়াখালীর ১৩২০ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি এতবড় সূর্যমুখীর ক্ষেত কখনো দেখেননি। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি এই ক্ষেতে এসেছেন। পাশাপাশি তাদের নিয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
আমতলীর নীলগঞ্জ গ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থী ইসাহাক মিয়া বলেন, আমাদের উপজেলার বেশ কিছু স্থানেও সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। তবে একই স্থানে এত বড় জায়গায় হয়নি। এখানে যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। এখানে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে মৌমাছির মধু সংগ্রহের দৃশ্য। যেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি।
পশ্চিম রজপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সালেহ বলেন, বর্তমানে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেশি। আমরা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১০ জন মিলে এই ১০ একর জমিতে সূর্যমখীির আবাদ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এই ফুল দিয়েই আমরা তেল তৈরি করতে পারবো এবং আমাদের এক বছরে আর তেল কেনা লাগবে না।
অপর কৃষক হাসান প্যাদা জানান, ক্ষেতের দিকে দুই চোখ গেলে মনটা ভরে যায়। এতো ভালো ফলন হবে আগে কখনো ভাবেননি। এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে। তাদের দেখাদেখি ইতোমধ্যে আরো অনেক কৃষক সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। এ ছাড়া, আগামীতে তারা আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী আবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআরএম সাইফুল্লাহ বলেন, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের হাইসান জাতের সূর্যমুখীর বীজ বিনামূল্যে সরবারহ করা হয়েছে। ফলে গতবারের তুলনায় জেলায় এবছর সূর্যমুখীর আবাদ অনেকটা বেড়েছে। এ ছাড়া, কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম রজপাড়া গ্রামে। প্রতিদিন ওই এলাকায় ক্ষেত পরিদর্শনে শত শত মানুষ ভিড় করছেন।
ঢাকা খামার বাড়ির তেল জাতীয় ফসল উৎপাদান বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ জসিম উদ্দিন বলেন, ভোজ্য তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে উপকূলের কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ জমি লবণ সহিষ্ণু হলেও ওই এলাকায় সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় খাটো জাতের সূর্যমুখীর বীজ কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ক্ষেত পরিদর্শন করেছি এবং কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবসসহ বিভিন্ন সভা সেমিনার করেছি।