সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল। ছোটবেলা থেকেই তার গাছের প্রতি ভালোবাসা। লেখাপড়ার পাশাপাশি গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা ছিল তার প্রধান নেশা।
তৌহিদুল ইসলাম রাসেল কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ১৬ দাগ পশ্চিমপাড়ার আলহাজ্ব রহমত উল্লাহ’র ছেলে। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। অফিস থেকে ছুটি পেলে ছুটে আসেন তার প্রিয় ক্যাকটাস ছাদবাগানে।
বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটসে যুক্ত থাকাকালীন একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন। একসময় ক্যাকটাস সংগ্রহে তার শখ জাগে। নিজের বাড়ির ছাদ এবং বাড়ির পেছনের বাগানে ৬টি শেড করে ক্যাকটাস গাছ লাগান। এখন তার সংগ্রহে প্রায় ৪০০ প্রজাতির ৪০ হাজারেরও বেশি ক্যাকটাস রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছপ্রেমীরা তার বাড়িতে ভিড় জমান।
সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল জানান, ভালোবাসা থেকেই সংগ্রহ করেন বিভিন্ন গাছ। নতুন প্রজাতির ক্যাকটাস উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন অফিসের ফাঁকে ফাঁকে। ক্যাকটাস মরুর উদ্ভিদ। টিকিয়ে রাখতে শেড নির্মাণ, গাছের কাঁটা পর্যবেক্ষণ ও মাটি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন যত্ন নেন।
তিনি বলেন, বাসায় এসে প্রথমে ছাদে যাই। ঘরে যেতে রাত ১টা বেজে যায়। তারপরও শখের বশে চলে আমার এ কাজ। বীজ উৎপাদন, সেখান থেকে নতুন প্রজাতির ক্যাকটাস উদ্ভাবন, ক্যাকটাসের জন্য পলিথিনের শেড নির্মাণ, গাছের কাঁটা পর্যবেক্ষণ, মাটি পরিবর্তনসহ সবই করি নিজে। তবে প্রথমদিকে এই মরুর উদ্ভিদকে বশে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় এক সংগ্রাহকের পরামর্শে আসে সফলতা।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে ক্যাকটাসের এই সংগ্রহশালাটি ২ হাজার প্রজাতিতে উন্নীত করার চেষ্টা করছি। সেইসঙ্গে একে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে। ভবিষ্যতে আমরা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একটি ক্যাকটাস পার্ক গড়ে তুলতে চাই। যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। প্রথম গাছ আমদানি করেছি ভারত থেকে। পরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন ও আমেরিকা থেকেও ক্যাকটাস আমদানি করেছি। বর্তমানে আমাদের কাছে প্রায় ৪০ হাজার বীজও রয়েছে।
তৌহিদুল ইসলাম রাসেলের বাবা আলহাজ্ব রহমত উল্লাহ বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। তারমধ্যে রাসেল স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ ক্যাকটাস সংগ্রহ করে। ২০১৯ সালে এই ক্যাকটাস বাগান শুরু করে। চাকরি পাওয়ার পর এই সংগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ক্যাকটাস সম্পর্কেও তার জানাশোনাও অনেক ভালো। ছুটিতে বাড়ি আসলে সে গভীর রাত পর্যন্ত নিজ হাতে গাছ পরিচর্যা করে থাকে। অনেক সময় শেডে তার খাবার দিয়ে আসতে হয়। তার পরিকল্পনা দেশের মানুষের কাছে ক্যাকটাস সহজলভ্য করে তোলা এবং একটি ক্যাকটাস পার্ক তৈরি করা।
ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেলের মতো আমি গাছ ভালোবাসি। তার ক্যাকটাসের বাগান দেখে আগ্রহটা আরও বেশি বেড়েছে। সশরীরে দেখতে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগল। এত কালেকশন আমি আমার জীবনেও দেখিনি।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মাহামুদুর রহমান ইসরাফিল বলেন, সার্জেন্ট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল ক্যাকটাস গাছ ও তার কাটাগুলোকে অনেক সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছেন। আমরা যদি মানুষের গুণগুলোকে এমন করে সাজাতে পারতাম, তাহলে সমাজটা সুন্দর হতো।