চাঁদপুরের উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিনের বাগানে প্রথমবারের মতো মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল ফল চাষ করা হচ্ছে। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন নতুন বৃক্ষ প্রেমীরাও এখন করোসল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা সদরের শাহতলী এলাকায় হেলাল উদ্দিনের ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে গিয়ে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক এই করোসল ফল গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
জানা যায়, করোসল ফলের স্বাদ অনেকটা দইয়ের মতো। এ গাছের পাতা গুড়ো করে চায়ের মতো করে খাওয়া যায়। পাতা দিয়ে রস তৈরি করে দু’বেলা নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হয়। গাছটির ছাল শুকিয়ে ভিজিয়ে রেখে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়। এর মধ্যে থাকা আনোনাসিয়াস অ্যাসেটোজেনিন নামক এক ধরনের যৌগ রয়েছে। যা ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি ক্যানসার কোষে শক্তি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ আটকে দেয়।
করোসল ফলের ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ মানুষ প্রথম জানতে পারে ১৯৭৬ সালে। ক্যান্সার প্রতিরোধী ঔষধি গুণাগুণের কারণে এখন মানুষের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ফলটি। কেমোথেরাপিতে রোগিদের চুল পড়লেও ক্যান্সার কোষ দমনকারী করোসল ফল খেলে তেমনটা হয় না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট এই গাছটির একেকটি চারার মূল্য দুই থেকে দশ হাজার পর্যন্ত রাখছে। একটি ২৫০ গ্রাম ফলের দাম ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এজন্য বাংলাদেশে বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে এই বিশেষ ফলটি।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি এখানে ৪৭ প্রজাতির আম চাষে সফলতা পেয়েছি। এরপর করোসল ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছি। এ ফলকে বলা হয় ক্যান্সারের প্রাকৃতিক কেমোথেরাপি। ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে কার্যকরী করোসল গাছ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। তাই করোসল চাষে আমি আয়ের নতুন দিশা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, করোসল নামের ফলটি শুধু ঔষধই নয় বরং এর গাছের ছাল ও পাতাও ক্যান্সার, লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রস্টেটের সমস্যায়ও নিরাময় হিসেবে কাজ করে। অন্যান্য ঔষধি ফলের মতো এই ফল তীব্র এবং কটু গন্ধযুক্ত। এর কাঁটাযুক্ত বহিরাবরণ খাওয়ার অনুপযোগী। করোসল ফল কেমোথেরাপির চেয়ে ১০ হাজার গুণ শক্তিশালী হলেও এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলটি খেলে ক্যান্সার রোগীর থেরাপির প্রয়োজন হয় না। শরীরও চাঙ্গা থাকে এবং দুর্বল ভাব আসে না।
ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পের মালিক হেলাল বলেন, কয়েক বছর আগে থাইল্যান্ড থেকে চারটি ভিন্ন ভিন্ন জাতের গ্রাফটিং চারা সংগ্রহ করি। এর মধ্যে একটি গাছ মারা গেছে। এখন দুটি জাতের তিনটি করোসল গাছ আছে। সাধারণত করোসল ফুল এবং ফল আসে গাছ লাগানোর কমপক্ষে তিন বছর পর। কিন্তু এখানে দুটি গাছেই এবার ফুল এসেছে। তবে এর বংশ বিস্তার কঠিন। গ্রাফটিং করা চারাও অনেক সময় মারা যায়। এজন্য জোড়কলম বা গুটি কলমের মাধ্যমে এখানে গাছগুলোর বংশ বিস্তার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, করোসল অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। গাছটি উঁচুস্থানে লাগাতে হয়। আমি বেলে দোআঁশ মাটির সঙ্গে ভার্মি কম্পোষ্ট, ট্রাইকো কম্পোষ্ট, শুকনো গোবর, হাড়ের গুড়ো, নিম খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে গাছ রোপণ করেছি। এর মধ্যে দুটি গাছ প্রায় ১২-১৫ ফুট উঁচু হয়েছে। ইচ্ছে আছে এ গাছগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিব। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে গাছ সম্পর্কে মানুষ জানতে আসায় বেশ ভালো লাগছে।