পজিটিভ বাংলাদেশ

মাল্টা চাষে রাবি শিক্ষার্থীর বাজিমাত

‘ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। কিন্তু কি করবো ভেবে পেতাম না। একদিন এক শিক্ষকের বাসার ছাদে মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। করোনার মধ্যে ৯৬০টি মাল্টা গাছ রোপণের মাধ্যমে শুরু করি চাষ। ফলনের প্রথম বছরে সফলতা ধরা না দিলেও চলতি মৌসুমে দশ লাখ টাকা মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

এভাবেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফারাদুজ্জামান ফাহিম।

তিনি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামের মোজাম্মেল হক ও মোছা. ফরিদা বেগম দম্পতি পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। গ্রামের মির্জাগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে।

তরুণ এ উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে ৩.১৫ একর জমিতে ৯২০টি মাল্টা ও ৪০টি কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। রোপণের দ্বিতীয় বছর আশানুরূপ ফলন না পেলেও হতাশ হননি। মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন ফলনের প্রথম বছরে। তবে চলতি বছরে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তিনি অন্তত ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন।

ফারাদুজজান ফাহিম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান। তার মাল্টা বাগানে চারজন শ্রমিক প্রতিনিয়ত দেখাশোনা ও পরিচর্যার কাজ করছেন। এছাড়াও মৎস্য খামার এবং মাঠ ফসলের বিভিন্ন প্রজেক্টে ১০ জনের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে কৃষিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

ফাহিম বলেন, ‘২০২১ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড পাবলিক কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় এক শিক্ষকের ছাদ বাগানে মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। পরে সশরীরে বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করি এবং স্থানীয় ডোমার উপজেলা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আনিসুজ্জামান স্যারের পরামর্শক্রমে বাগান স্থাপন করি।’

তিনি বলেন, রোপণের দ্বিতীয় বছরে বাগানে সেভাবে ফল ধরেনি, তবুও হতাশ হইনি। এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি এবং আরও ৬-৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে ধারণা করছি। এটা সহজলভ্য হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ প্রজেক্টে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে মাইলফলক সৃষ্টি করতে পারবো।’

বাগান ঘুরতে এসে অভিভূত হন ফাহিমের স্কুল শিক্ষক মো. দুলাল উদ্দিন। এমন উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ফাহিমের মাল্টা বাগানে গিয়ে আমি সত্যি অভিভূত হয়েছি। নয় বিঘা জমির উপর অসাধারণ এক মাল্টা বাগান করেছে ফাহিম। মাল্টা গাছগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছিল। ফাহিম পরিশ্রমী একটা ছেলে। ছাত্রজীবনে পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে, যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সবাই যদি ফাহিমের মতো এমন আগ্রহী হয়ে উঠে, তাহলে দেশে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার উপজেলার কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফাহিম ডোমার উপজেলার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিন একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তার বাগানে প্রায় ১ হাজার বারি মাল্টা-১ জাতের গাছ এবং ১৫০টির মতো কমলার গাছ আছে। এ বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা প্রায়ই তার বাগান পরিদর্শন করেন। ফাহিমের মত তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বদলে যাবে বাংলাদেশের কৃষি কার্যক্রম।’