দেহঘড়ি

বুকে জমে থাকা কফ দূর করার ৭ উপায়

সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে বুকে কিছু কফ বা শ্লেষ্মা জমা স্বাভাবিক। কখনো কখনো অতিরিক্ত শ্লেষ্মাও দুশ্চিন্তার কিছু নয়। কিন্তু বুকে প্রায়সময় অতিরিক্ত শ্লেষ্মার উপস্থিতি অনুভব হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রদাহ হলে ও শ্লেষ্মা জমলে বুকে অস্বাভাবিক শব্দ হয়, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে ও গলা ব্যথা করে। ভাইরাস সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, অ্যালার্জি, অ্যাজমা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, ব্রনকাইটিস, সিওপিডি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ও অন্যান্য ফুসফুসীয় সমস্যায় বুকে শ্লেষ্মা জমতে পারে। এখানে বুকের শ্লেষ্মা কমাতে কিছু কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি দেয়া হলো।

গরম পানীয়: পর্যাপ্ত গরম পানি পান করলে শ্লেষ্মা পাতলা হবে ও কাশির মাধ্যমে সহজে বের হয়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গরম পানীয় বুকের শ্লেষ্মা দূর করে ব্যথা ও অন্যান্য অস্বস্তিকর অনুভূতি প্রশমিত করতে পারে।গরম স্যূপ, ব্ল্যাক টি বা গ্রিন টি, হার্বাল টি অথবা সাধারণ পানি পানে এই উপকার পেতে পারেন। এখানে গরম পানি বলতে কুসুম গরম পানিকে বোঝানো হচ্ছে।

আর্দ্র বাতাস: কক্ষের বাতাসকে আর্দ্র করলে শ্লেষ্মা পাতলা হবে ও কাশি বা গলার অস্বস্তি কমে যাবে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট কক্ষের বাতাসকে আর্দ্র করতে হিউমিডিফাইয়ার বা স্টিম ভেপোরাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। রাতে ঘুম যেতে সমস্যা হলে হিউমিডিফাইয়ার সহায়ক হতে পারে- প্রতিক্রিয়া বাড়াতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন। এছাড়া গরম পানির ভাপ টানলে অথবা উষ্ণ গোসলেও শ্লেষ্মা পাতলা হবে।

লবণ পানি: লবণ পানির মিক্সচারে গার্গল করলেও বুকের শ্লেষ্মা দূর হবে ও উপসর্গ উপশম হবে। এক মগ পানিতে আধ চা-চামচ লবণ ঢেলে নাড়তে থাকুন। লবণ মিশে গেলে গার্গল করতে থাকুন। লবণ পানিকে মুখের ভেতর কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড রাখতে হবে। ঠান্ডা নয়, কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পানির গড়গড়া তেমন কার্যকর নয়।

মধু: ঘরোয়া চিকিৎসার একটি জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হলো মধু। গবেষণায় পাওয়া গেছে, মধুতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। বুকে শ্লেষ্মা জমলে মধু খেলে কমে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উপসর্গ দূর না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ৩-৪ ঘণ্টায় এক টেবিল চামচ মধু সেবন করতে পারেন। ১২ মাসের কম বয়সি শিশুদের জন্য মধু উপযুক্ত নয়।

কিছু খাবার: কিছু খাবার ও মসলা বুকের শ্লেষ্মা কমাতে পারে, যেমন- রসুন, আদা, লেবু ও শুকনো মরিচের গুঁড়া বা ঝাল মরিচ। এছাড়া কিছু গবেষণা ধারণা দিয়েছে যে ভাইরাস সংক্রমণে গলায় শ্লেষ্মা জমলে বেরি, জিনসেং, পেয়ারা, যষ্টিমধু, ডালিম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।

এসেনশিয়াল অয়েল: কিছু এসেনশিয়াল অয়েল শ্বাসক্রিয়া সহজ করে ও বুকের শ্লেষ্মা পাতলা করে। বাসিল, সিনামন বার্ক, ইউক্যালিপটাস, পিপারমিন্ট, রোজমেরি ও টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল বুকের শ্লেষ্মা কমাতে পারে। এসেনশিয়াল অয়েলের বোতল থেকে সরাসরি ঘ্রাণ শুঁকতে পারেন অথবা গরম পানিতে অল্প মিশিয়ে ভাপ নিতে পারেন। এছাড়া এককাপের চারভাগের একভাগ নারকেল তেলের সঙ্গে একটি এসেনশিয়াল অয়েলের ১২ ফোঁটা মিশিয়ে বুকে মালিশ করতে পারেন, কিন্তু ত্বকে ক্ষত থাকলে ব্যবহার করবেন না। প্রথমবার কোনো এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে গেলে আগে এটা টেস্ট করতে হবে যে ওই তেলকে সহ্য করার ক্ষমতা ত্বকের আছে কিনা। এসেনশিয়াল অয়েল খেতে যাবেন না।

মাথাকে উঁচুতে রাখা: বুকের অত্যধিক শ্লেষ্মা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।এই সমস্যা এড়াতে অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করে মাথাকে উঁচুতে তুলুন। এর ফলে বুক থেকে শ্লেষ্মা বের হয়ে যেতে পারবে ও কাশি বা অস্বস্তি কমে যাবে। কিছু গবেষণায় এই পদ্ধতি অনুসরণে উপকার পাওয়া গেছে।

তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে

 

ঢাকা/ফিরোজ