দেহঘড়ি

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর যেসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না

করোনা মহামারি যেন থামতেই চাইছে না। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক মানুষই টিকা নিয়েছেন, কিন্তু তারপরও সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। ভাইরাসটি তার রূপ পরিবর্তন করে আগের চেয়ে দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তবে আশ্বস্তের বিষয় হচ্ছে, এখনো পর্যন্ত সংক্রমণটিতে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান মহামারি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন, যার ফলে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। গবেষণা অনুসারে, কোভিড-১৯ থেকে নিরাময়ের পরও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা ও প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

জার্নাল নেচারে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই যারা তীব্র অসুস্থ ছিলেন, সুস্থ হওয়ার পরও তাদের হার্ট ও কিডনিতে মারাত্মক পরিণতির উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উদ্বেগজনক জটিলতা বা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

বিশ্বে যতজন লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন তাদের প্রায় ১০ শতাংশই দীর্ঘসময় স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। চিকিৎসকদের মতে, যারা কোভিড-১৯ সংক্রমণে চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপসর্গে বা অসুস্থতায় ভুগছেন তাদেরকে ‘লং হলার’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

কোভিড-১৯ থেকে নিস্তার পেয়েছেন এমন কিছু লোকের ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবোটিস ও কিডনি রোগ হতে পারে।কোভিড-১৯ ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যকার যোগসূত্র এখন অবধি নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা হলো, করোনার সংক্রমণ জনিত প্রদাহ থেকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারো কারো মতে- সংক্রমণটি সুপ্ত স্বাস্থ্য সমস্যাকে উন্মোচন করছে মাত্র, নতুনভাবে রোগ সৃষ্টি করছে না।

যদি আপনি ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ থেকে নিরাময় পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এখনো সচেতনতার প্রয়োজন আছে।আপনি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না যে, ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা বা পরিণতিতে ভুগতে হবে না। হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখলে চিকিৎসককে জানাতে দেরি করবেন না।

হৃদরোগের লক্ষণ:

* বুকে অস্বস্তি

* বুকের ব্যথা বাম বা ডান বাহুতে ছড়িয়ে পড়া

* স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ঘেমে যাওয়া

* হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা

* সহজেই দুর্বল/ক্লান্ত হয়ে পড়া।

কিডনি রোগের লক্ষণ:

* ঘনঘন প্রস্রাব করা

* প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত

* গোড়ালি বা পায়ে ফোলা

* ত্বকে শুষ্কতা ও চুলকানি

* ওজন কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা।

ডায়াবোটিসের লক্ষণ:

* সংগত কারণ ছাড়াই অত্যধিক পিপাসা

* হাত বা পায়ে অসাড়তা/ঝিনঝিনানি

* তীব্র ক্ষুধা

* প্রতিনিয়ত ক্লান্তি

* ঘনঘন প্রস্রাবের চাপ।

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর কাদের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে?

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। কারো কারো মতে, যাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের পূর্ব হতেই মৃদু রোগ থেকে তীব্র স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তারা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। এছাড়া বয়স্ক লোকেরাও লং হলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তাদের শরীরে অপ্রকাশিত রোগ থাকার সম্ভাবনা বেশি।

কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সংক্রমিত হয়ে গেলেও গুরুতর পরিণতি এড়াতে ইমিউন সিস্টমকে শক্তিশালী করুন। ইমিউনিটি বাড়ানোর কয়েকটি কার্যকরী উপায় হলো- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা, দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত ঘুম। টিকা পাওয়া গেলে টিকাও নিয়ে নিন। মনোবল ধরে রাখুন।