বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কীটপতঙ্গের কামড়জনিত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এসব রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া অন্যতম। মশার কামড়ে এসব রোগ এখন মারাত্মক আকার করেছে।
আমাদের দেশে এখন ডেঙ্গু মারাত্মক রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথার মতো একই রকম লক্ষণ দেখা যায় বলে রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে না চিকুনগুনিয়া তা প্রথমে বোঝা একটু কঠিন হয়ে পড়ে।
ডেঙ্গু: এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস জনিত এই রোগ হয়। মাইল্ড ডেঙ্গুতে শরীরে অনেক জ্বর থাকে, সিভিয়ার ডেঙ্গুতে শরীরের কিছু অঙ্গ থেকে রক্ত ঝরা, রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া এমনকি তাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে বিশ্বের অনেক দেশেই আকস্মিকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীই সাধারণত সেরে উঠেন। প্রতিবছর বিশ্বে গড়ে ৩৯ কোটির বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ১২০টিরও বেশি দেশে এ রোগ দেখা যায়। এই রোগের উপসর্গ দুই থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকে।
চিকুনগুনিয়া: ডেঙ্গুর মতো এডিস মশার কামড়েই হয় ভাইরাসজনিত এই রোগ। এতে প্রচন্ড জ্বর, শরীরের জয়েন্টে খুব ব্যথা হয়। এছাড়া এ রোগে অনেকের মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরের জয়েন্ট ফোলা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমিভাব হয়, গায়ে র্যাশ উঠে। এই রোগের উপসর্গ দুই থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মাঝে ১ হাজারে ১ জনের মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উপসর্গে পার্থক্য
দুই রোগেই প্রচন্ড জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা যায়। চিকুনগুনিয়ায় শরীর ও মাংসপেশিতে প্রচন্ড ব্যথা হলেও ডেঙ্গুতে রক্তের প্লেটলেট কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। দুই রোগের মাঝে এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। ডেঙ্গুতে অনেক রোগীর মাইক্রোলিটার রক্তে প্লেটলেট ১০ হাজারের নিচেও নেমে আসে। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় প্লেটলেট খুব বেশি কমে না, মাইক্রোলিটার রক্তে ১ লাখ ৫০ হাজারের নিচে প্লেটলেট কমলে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা হয়।
ডেঙ্গু রোগীর শরীর ব্যথা চিকুনগুনিয়া রোগীর চেয়ে বেশি থাকে। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়া রোগীর জয়েন্টে ব্যথা ডেঙ্গু রোগীর চেয়ে বেশি হয়। হাত ও হাঁটুর আশেপাশে সেই ব্যথা থাকে। এছাড়া ডেঙ্গু হেমোরেজিকে আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে রক্ত ঝরে যা চিকুনগুনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। চিকুনগুনিয়া রোগীর শরীরের মুখমণ্ডলে, হাতের তালুতে, হাতে, পায়ে র্যাশ দেখা যায়। ডেঙ্গু রোগীর র্যাশ থাকে শুধু মুখমণ্ডলে ও হাতে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, উইকিপিডিয়া, ডাব্লিউএইচও