চোখের লম্বা ঘন পাপড়ি চোখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে চোখের পাপড়ি কমতে থাকা যে কেবল চোখের সৌন্দর্য ম্লান করে তা নয়, পাশাপাশি মারাত্মক কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিদিন পাঁচটি পর্যন্ত চোখের পাপড়ি বা আইল্যাশ ঝরে পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু বেশি পরিমাণে পাপড়ি ঝরা শুরু হলে সতর্ক হতে হবে। এ প্রতিবেদনে চোখের পাপড়ি ঝরে পড়ার আটটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
* অত্যধিক ডলন: বিশেষজ্ঞরা চোখের আশপাশের মতো সংবেদনশীল স্থান পরিষ্কারের ক্ষেত্রে খুব সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেকআপ তুলার সময়। ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সহকারী অধ্যাপক জেনি লিউ বলেন, চোখে অতিরিক্ত ডলাডলি ও পাপড়ি টানা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। স্লিপ মাস্কের ঘষা লেগেও পাপড়ি ঝরে যেতে পারে। নিশ্চিত হতে হবে যেন স্লিপ মাস্ক খুব টাইট না হয়।
* ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: যদি মেকআপের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ পার হয়ে যায়, তবে এটি চোখের পাপড়ি ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ চোখের সামগ্রী প্রায়ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। ডা. ফ্র জানান, প্রতি তিন মাস পরপর মাসকারা ফেলে দিতে হবে, কারণ সেখানে স্টাফ ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটতে পারে। মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা পাপড়ি হারানোর কারণ হতে পারে।
* অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন: ডা. লিউয়ের মতে, কসমেটিক, আই মেকআপ, মেকআপ রিমুভার এবং নেইল পলিশের প্রতি অ্যালার্জি হলো আইলিড ডার্মাটাইটিসের প্রচলিত কারণ। সমস্যাটি তীব্র হলে চোখের পাপড়ি ঝরে পড়তে পারে। যদি মনে করেন যে, কসমেটিক বা আই ক্রিমের প্রতি অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন থেকে পাপড়ি ঝরে পড়ছে, তাহলে সেসব চোখের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করুন এবং কিসের প্রতি অ্যালার্জিক তা জানতে অ্যালার্জি টেস্ট করুন।
* ফলস আইল্যাশ: যারা ফলস আইল্যাশ ব্যবহার করেন, তাদের ন্যাচারাল আইল্যাশ ঝরে পড়তে পারে। ডা. ফ্রাঙ্ক জানান, ‘অনেকেরই ফলস আইল্যাশের প্রতি অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হতে পারে। এই রিয়্যাকশন জনিত প্রদাহের কারণে ন্যাচারাল আইল্যাশ ঝরে পড়তে পারে। এছাড়া ফলস আইল্যাশের গ্লু ন্যাচারাল আইল্যাশের সঙ্গে লেগে যায় এবং তা যথার্থভাবে তুলতে না পারলেও ন্যাচারাল আইল্যাশ হারাতে হতে পারে।
* থাইরয়েড ডিসঅর্ডার: ডা. ফ্রাঙ্ক জানান, থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। ওভারঅ্যাক্টিভ বা আন্ডারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড এসব হরমোনে পরিবর্তন এনে চোখের পাপড়ি ঝরাতে পারে। তিনি আরো বলেন, থাইরয়েড সমস্যার অন্যান্য উপসর্গ ব্যক্তিভেদে তারতম্য হতে পারে। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে ওজন হ্রাস, ওজন বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্যহীনতা, উদ্বিগ্নতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য উল্লেখযোগ্য। এসব উপসর্গ থাকলে এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন।
* ব্লেফারাইটিস: চোখের পাতায় প্রদাহ হওয়াকে ব্লেফারাইটিস বলে। এই সমস্যায়ও চোখের পাপড়ি ঝরে পড়তে পারে। ব্লেফারাইটিস সমস্যায় চোখের পাতায় সাদা ময়লা জমতে পারে, লাল হতে পারে, পানি পড়তে পারে ও চোখে বালু পড়েছে প্রকৃতির অনুভূতি হতে পারে।
* ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া: ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো ব্যক্তি ইমোশনাল স্ট্রেসের কারণে নিজের চোখের পাপড়ি টেনে তুলে ফেলে। এটি জেনেটিকও হতে পারে। চোখের পাপড়ি টেনে তুলে ফেলার প্রবণতা থাকলে থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হোন।
* ক্যানসার: চোখের পাতায় স্কিন ক্যানসার হলেও পাপড়ি ঝরে পড়তে পারে, কারণ ক্যানসার লোমগ্রন্থিকে আক্রান্ত করে। তবে এটা বিরল।চোখের পাতায় স্কিন ক্যানসারের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- চোখের পাতায় লাল বা কালো বা বাদামি বিচরণশীল বৃদ্ধি, চোখের পাতায় শুকাচ্ছে না এমন ক্ষত, চোখের পাতার ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, চোখের পাতায় ঘনঘন সংক্রমণ এবং চোখের পাতায় ফোলা বা পুরুত্ব বেড়ে যাওয়া।এসব লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
তথ্যসূত্র: রিয়েল সিম্পল