দেহঘড়ি

শিশুর হার্টের ছিদ্র কি ভালো হয়

আদরের সোনামনির হৃদপিণ্ডে ছিদ্র থাকা কোনো বাবা মায়ের জন্যই সুখকর নয়। হার্ট বা হৃদপিণ্ডের এই রোগ মূলত একটি জন্মগত ত্রুটি। সাধারণত গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃৎপিণ্ডের বিকাশজনিত সমস্যার কারণে এই ছিদ্র দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে আট থেকে নয়টি শিশু এই রোগে ভুগে থাকে।

চিকিৎসকেরা বলছেন,  মানবদেহের ফুসফুস রক্তে অক্সিজেনের যোগান দেয়। আর সেই অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সারা শরীরে পরিবহনের কাজ করে হৃদপিণ্ড। ছিদ্রের কারণে হার্ট ও ফুসফুসের মধ্যে রক্ত চলাচল অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। হৃদপিণ্ডের ছিদ্রটি রক্তের স্বাভাবিক গতিপথে বাধা দেয়।

বিভিন্ন কারণে শিশুর হৃদপিণ্ডে ছিদ্র হতে পারে। যেমন- জেনেটিক সমস্যা ডাউন সিনড্রোম থাকলে শিশুর হার্টে ছিদ্র দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভবতী হওয়ার প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে যদি মায়ের রুবেলা হয় তাহলে শিশুর হার্টে ছিদ্র বা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া মায়ের যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,  ভাইরালজনিত ইনফেকশন কিংবা অপুষ্টিজনিত রোগ থাকলেও শিশুর এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মায়ের মদ ও তামাক জাতীয় পণ্য খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এবং গর্ভবতী থাকাকালীন মা যদি খিঁচুনি প্রতিরোধী ওষুধ, কোলেস্টরেল কমানোর ওষুধ, ব্রণের ওষুধ এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন। সেটিও শিশুর হৃদপিণ্ডে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াও শিশুর হার্টে ছিদ্র দেখা দিতে পারে।

হৃদপিণ্ডে ছিদ্র থাকলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়: যদি ছিদ্র ছোট হয়, তাহলে শিশু জোরে জোরে শ্বাস নেয়, ঘন ঘন কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাসনালীতে ইনফেকশন বা নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সামান্য খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল লাগে, ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে পড়ে। বুক ধকধক করতে থাকে, অনেক সময় খালি চোখে বুকের মাংসপেশির লাফানো দেখা যায়। এসব শিশুরা সব সময় জ্বর বা অসুস্থ থাকে। খেতে পারে না, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। খাওয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে যায়, কান্নাকাটি করে এবং অল্পতেই ঘামতে থাকে। কান্নার সময় দম আটকে যায়। বয়সের সাথে ওজন বাড়ে না। পা, পায়ের পাতা ও পেট ফুলে যায়।

শিশুর হার্টের ছিদ্র শনাক্ত হলে:  চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে হবে। খেলাধুলা, ছুটোছুটি বা কায়িক শ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। ছিদ্র বড় হলে চিকিৎসকের পরামর্শে যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে পারলে ভালো। এতে শিশুটি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। চিকিৎসার পর শিশুরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও চিকিৎসকরা দীর্ঘসময় ধরে তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এজন্য নিয়মিত ফলো-আপ ভিজিট করতে হবে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে হার্ট বড় হয়ে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি