প্রত্যেকের গলায় টনসিল আছে। আমাদের গলা ব্যথা হলেই ভেবে নেই টনসিলের সমস্যা হয়েছে। আরও একটু বাড়িয়ে ভাবি, হয়তো অস্ত্রোপচার করাতে হবে। টনসিল কী, এর লক্ষণ কী এবং এই রোগ হলে কী করণীয়— এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সাথে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন।
ডা. হাসানুল হক নিপুন বলেন, টনসিল জন্মের পর থেকে সব মানুষেরই গলায় থাকে। টনসিলে যখন ইনফেকশন হয় তখন তাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলে। আমাদের গলার দুইপাশে যে লসিকাগ্রন্থি থাকে সেটাই টনসিল। মুখের ভেতর আরো অনেক লসিকাগ্রন্থি থাকে, তবে সবচেয়ে বড়টা হচ্ছে টনসিল। টনসিলে যখন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস আক্রমণ করে তখন প্রদাহের সৃষ্টি করে। টনসিলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। শিশু বয়সেই টনসিলে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। ৩-১৫ বছরের মধ্যে টনসিলের আক্রান্তের হার বেশি। এর পাশাপাশি শিশুদের নাকের পেছনে আরেক ধরনের লসিকাগ্রন্থি থাকে যার নাম এডিনোয়েড; আমরা বলি এডিনোটনসিল।
টনসিলাইটিস একিউট ও ক্রনিক এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। একিউট টনসিলাইটিস হঠাৎ একদিন হতে পারে আবার ৫-৬ দিন পর চলে যায়। ক্রনিক টনসিলাইটিস প্রায়ই হয়ে থাকে এবং ব্যথা হয়।
টনসিলের উপসর্গ
* গলায় তীব্র ব্যথা থাকবে * পানি খেতে অসুবিধা হবে * ঢোক গিলতে বা নিজের লালা গিলতে সমস্যা হবে * লালাগ্রন্থি ফুলে যাবে * হালকা বা তীব্র জ্বর হতে পারে * শরীরে ম্যাজম্যাজ ভাব হতে পারে
টনসিলের সঙ্গে যদি শিশুদের এডিনয়েড থাকে তাহলে প্রতিদিনের কাজে বা রুটিন ওয়ার্কে সমস্যা হবে। শিশুরা স্কুলে যেতে চাইবে না বা খেলাধুলো করবে না। এডিনয়ের লক্ষ্মণগুলো হলো:
* টনসিলের সাথে কারো এডিনোয়েড সমস্যা থাকলে মুখ হা করে শ্বাস নেবে * ঘুমানোর সমর ঘরঘর শব্দ হবে * মুখ দিয়ে লালা পড়বে * আস্তে আস্তে উপরের পাটির দাঁত সামনের দিকে চলে আসবে * নাকের ছিদ্র ছোট হয়ে যাবে * ফেসের ভেতর ডালনেস চলে আসবে
টনসিলে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক করণীয়
টনসিলে আক্রান্ত হলে ঘাবড়ানো যাবে না। বাসায় কিছু কাজ করতে পারেন টনসিল প্রতিরোধের জন্য। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গারগিল করতে পারে। ঠান্ডা পানি পরিহার করতে হবে। দুই-তিনদিন যদি এভাবে যাওয়ার পর ভালো না হয় তবে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি দেখা যায় টনসিলে ইনফেকশন আছে তাহলে প্রয়োজনীয় মেডিসিন নিতে হবে।
ঠান্ডা পানি খেলেই কী টনসিল হয়?
ঠান্ডা পানি খেলে টনসিলে ইনফেকশন হতে পারে। এজন্য অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম শিশুদের কম খেতে দিতে হবে। এসব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
টনসিলের ঝুঁকি কাদের বেশি?
ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন বলেন, একিউট টনসিলাইটিসে কেউ আক্রান্ত হলে মেডিসিন গ্রহণ করলে ভালো হয়ে যায়। যারা ক্রনিক টনসিলাইটিসে আক্রান্ত হয় তাদের ঝুঁকি বেশি। এই টনসিলে আক্রান্ত ব্যক্তির নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে:
* ঘনঘন টনসিল হলে টনসিলে এক ধরনের পুঁজ জমতে পারে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারও পুঁজ হলে সার্জারি করতে হবে
* দীর্ঘদিন টনসিলে আক্রান্ত থাকলে টনসিলে সাদা দাগ দেখা দেবে এবং ভাতের মতো দানাদার পদার্থ টনসিল থেকে বের হতে পারে
* এই টনসিলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা টনসিলার ক্যারাটোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারেন
* ক্রনিক ইনফেকশনের ফলে টনসিলে পাথর হতে পারে
* বয়ষ্ক অর্থাৎ ৫৫ বছরের বেশি বয়সে কারও টনসিল ফুলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে
টনসিলের একমাত্র সমাধান কী অপারেশন?
টনসিলে আক্রান্ত হলেই সাথে সাথে অস্ত্রোপচার করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। তাহলে কখন অস্ত্রোপচার করতে হবে?
* অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর যদি বছরে ৩ বারের বেশি সমস্যা দেখা দেয় * দুই বছরে ৫ বারের বেশি টনসিলের সমস্যা হয় * ৩ বছরে ৭ বারের বেশি টনসিলের সমস্যা হয় * শিশু যদি টনসিলের জন্য কয়েকদিন পরপর গলা ব্যথায় ভোগে * টনসিলে পাথর হলে * টনসিল বেশি বড় হয়ে গেলে * টনসিল ফুলে খাবার খেতে সমস্যা হলে * শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হলে * টনসিলে পুঁজ হলে
উল্লেখ্য, একিউট টনসিলে কেউ আক্রান্ত হলে তার অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন নেই বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।