দেহঘড়ি

ডায়াবেটিস কাদের হয়? লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোকই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকেন। এই রোগ হলে শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা বলেন, এই রোগ শিশুরও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।

ডায়াবেটির রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট (এমডি; এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম, বারডেম), এসসিই; এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ডায়াবেটিস, ইউকে- ডা: মিতা  দত্ত।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ: সাধারণত ডায়াবেটিসের লক্ষণ নাও থাকতে পারে এবং সেটা রুটিন চেকআপের মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে, তবে ডায়াবেটিস হলে বারবার প্রস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত পানি পিপাসা পাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন অথবা অন্য যেকোন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। একই সাথে যাদের বয়স কম তাদের ক্ষেত্রে উপরের পেটে তীব্র ব্যথা, বমি, অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া; এগুলা প্রকাশ পেতে পারে। এই লক্ষণগুলো ডায়াবেটিক কিটো-এসিডোসিস যা টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সচরাচর প্রকাশ পেয়ে থাকে এবং এটি একটি ডায়াবেটিস জনিত জরুরি অবস্থা।

শিশুদের কি ডায়বেটিস হয়?

হ্যাঁ। ডায়াবেটিস যেকোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। বোঝার সুবিধার্থে এ ক্ষেত্রে আমাকে ডায়াবেটিসের প্রকার নিয়ে বলতে হবে। ডায়াবেটিসকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়—টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ধরনের ডায়াবেটিস। শিশুদের জন্মের ছয় মাসের মধ্যে যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিওনেটাল ডায়াবেটিস বলা হয়। শিশুদের বয়স ৬ মাস পর থেকে বয়ঃসন্ধিকালের আগে এবং পরে টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থূলতা মহামারী আকার ধারণ করেছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস শিশুদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে  ডা: মিতা  দত্ত বলেন, ডায়াবেটিস হচ্ছে সারা জীবনের রোগ, সেই সাথে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, এক্সারসাইজ এবং ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তির ওজন, তাদের কাজের ধরন, অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, ইউরিক এসিডের সমস্যা সব কিছুর ওপর নির্ভর করে খাদ্য তালিকা বা ক্যালরি হিসাব করা হয়ে থাকে। রোগীদেরকে স্বাভাবিক ও সুষম খাবার গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা হয়। আদর্শ সুষম খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবার থাকে, তবে শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে যা ‘লো গ্লাইসেমিক ই কেক নডেক্স’ যেমন লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস এগুলা বেশি গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যেমন চিনি, মিষ্টি, কোকাকোলা, ও প্রক্রিয়াজাত খাবার একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ডায়াবেটিস হলে যেসব নিয়ম মানতে হবে সেই বিষয়ে মিতা দত্তের পরামর্শ

ডায়াবেটিস হলে যে সকল বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ। এক্ষেত্রে দিনের খাবারগুলোকে মোট পাঁচ থেকে ছয় ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার এর বাইরেও হালকা নাস্তা জাতীয় খাবার সকালে এগারোটার দিকে, বিকাল পাঁচটার দিকে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খেতে হবে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে এবং পরপর দুই দিন হাঁটা বন্ধ রাখা যাবে না। তবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে গাইনোকোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী হাঁটতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো জটিলতা না থাকলে পাঁচ থেকে দশ মিনিট করে করে তিন ভাগে হাঁটা যাবে। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন গ্রহণ করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার নির্দেশ মানতে হবে। যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অথবা ডায়াবেটিসজনিত কোনো জটিলতা আছে তারা যদি ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে চারবার অথবা ছয়বার ব্লাড সুগার চেক করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন নিজের পা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রতি তিন মাস পর পর ডায়াবেটিসের গড় রিপোর্ট মানে এইচ বি এ ওয়ান সি (HbA1C) পরীক্ষা করতে হবে। প্রতিবছর অন্ততপক্ষে চোখের রেটিনা, রক্তের কোলেস্টেরল, ক্রিয়েটিনিন এবং প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই সর্বোপরি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সর্বোত্তম সেবা পেতে এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

বলে রাখা ভালো, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা সেবা নিলে যে রকম দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়, ডায়াবেটিস রোগের জটিলতা হয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসা নেওয়ার পরেও ততটা সুফল পাওয়া যায় না। তাই নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা জরুরি।