ভাত এক ধরনের শস্যজাতীয় খাবার। যা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার প্রধান উৎস। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা মেটাতে ভাত খায়। চিকিৎসকেরা বলেন, ভাত খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া যাবে না। এতে ভাতে থাকা গ্লুকোজ দ্রুত আমাদের শরীরের রক্তে মিশে যায়। তাই ঘুমাতে যাওয়া অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা আগে ভাত খেতে হবে এবং শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। নিয়ম মেনে ভাত খেলে, এর সঠিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। সাধারণত দুই ধরণের চাল বাজারে রয়েছে। সাদা চাল এবং বাদামি চাল। সাদা চালের ভাতের পুষ্টিগুণ আর বাদামি চালের ভাতের পুষ্টিগুণ আলাদা হয়ে থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সেদ্ধ সাদা ভাতের পুষ্টিগুণ
১৩১কিলোক্যালরি ২.৮ গ্রাম প্রোটিন ০.৪ গ্রাম ফ্যাট ৩১.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ০.৫ গ্রাম ফাইবার
প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামি চালের ভাতের পুষ্টিগুণ
১২৩ কিলোক্যালোরি ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন ০.৯ গ্রাম ফ্যাট ২৯.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ১.৫ গ্রাম ফাইবার ৪৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম ১২৫ মিলিগ্রাম ফরফরাস
কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা ভাত ওজন বাড়াতে এবং পেটের চর্বি জমার কারণ হতে পারে। আবার কোনো কোনো গবেষণায় সাদা ভাতের সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তবে নিয়মিত সাদা ভাত খেলে রক্তে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেড়ে যায় বলে ধারণা করা হয়। বাদামি চালের ভাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট সাদা ভাতের চাইতে দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই কারণে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। ও ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এই ভাত শক্তি বাড়ায়, ক্ষুধা কমায় এবং ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, ‘‘প্রতিদিন সাদা ভাত খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ’’
পুষ্টিবিদ তাসনিম হাসিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে, তারা দিনে দুই বেলা পরিমিত বাদামী ভাত খেতে পারবেন।’’ এই পুষ্টিবিদ আরও বলেছেন, ‘যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, তারা একবেলার বেশি ভাত খাবেন না। এবং সেক্ষেত্রেও বাদামি ভাত খেতে হবে।’’
সাদা চালে শস্যের ওপরে থাকা পুষ্টি সমৃদ্ধ আঁশের আবরণ তুলে ফেলা হয়। এতে চাল বেশিদিন টেকে, রান্নাও হয় দ্রুত এবং এটি সহজে হজম হয়।
বিবিসিগুড ফুডের পুষ্টিবিদ কেরি টরেনস বলছেন, ‘‘পুষ্টির দিক থেকে সাদা চালে তুলনামূলক কম ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে। অন্যদিকে বাদামি চালে আঁশের আবরণ থাকায় এটি অধিক পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। তবে অনেক অ্যথলিটক তাদের শক্তি বাড়ানোর জন্য সাদা ভাত খান। কারণ সাদা ভাতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে। যা শারীরিক পরিশ্রমের পরে মাংসপেশীর গ্লাইকোজেনের মাত্রা দ্রুত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। যাদের বুকে জ্বালাপোড়াভাব, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং হজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সাদা ভাত বেশি উপকারী। অন্যদিকে বাদামি ভাত অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। তবে বাদামি চালের ভাত থেকে আর্সেনিক দূষণ হতে পারে।’’
সূত্র: বিবিসি