ঘুমের মধ্যে আমাদের শরীরে নানারকম পরিবর্তন ঘটে। উন্নত ঘুম স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আবার ঘুমের ব্যঘাত ঘটলে অনেক অসুস্থতায় ভুগতে হয়। ঘুমের সময় শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে এবং ঘুম উন্নত করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এফসিপিএস পার্ট ২ ট্রেইনি মনোবিদ ডা. মুনিরা হোসেন মনি।
এই মনোবিদ বলেন, ‘‘ঘুম হচ্ছে মানসিক এবং শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাসের একটি অবস্থা যেখানে চেতনা পরিবর্তিত হয় এবং কিছু সংবেদনশীল কার্যকলাপ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ঘুমের সময়, পেশী কার্যকলাপ এবং আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস রয়েছে। উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতার দিক থেকে ঘুম জাগ্রত হওয়া থেকে পৃথক হলেও, এটি এখনও সক্রিয় মস্তিষ্কের ধরণগুলোকে জড়িত করে, এটি কোমা বা চেতনার ব্যাধিগুলোর চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে ঘুমের পুনরাবৃত্তি পিরিয়ডের মধ্যে ঘটে, যার সময় শরীর দুটি স্বতন্ত্র মুড (Mood) এর মাধ্যমে পরিবর্তন করে: REM এবং NON-REM ঘুম। যদিও REM এর অর্থ হল ‘‘দ্রুত চোখের চলাচল’’, ঘুমের এই mode এ শরীরের ভার্চুয়াল প্যারালাইসিস সহআরও অনেক দিক রয়েছে। অন্যদিকে স্বপ্ন হল ইমেজ, ধারণা, আবেগ এবং সংবেদনগুলোর একটি উত্তরাধিকার যা সাধারণত ঘুমের নির্দিষ্ট পর্যায়ে মনের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে।’’
তিনি আরো জানান, ‘‘ঘুমের সময় শরীরের বেশিরভাগ সিস্টেমই অ্যানাবলিক অবস্থায় থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়ুবিক, কঙ্কাল এবং পেশীতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াগুলো আমাদের মেজাজ, স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক বজায় রাখে। আমাদের এন্ডোক্রাইন এবং ইমিউন সিস্টেমের কাজে ঘুম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান রিদম প্রতিরাতে ঘুমের প্রচার করে।’’
ডা. মুনিরা হোসেন মনি আরও বলেন, ‘‘মানুষ বিভিন্ন ঘুমের ব্যাধিতে ভুগতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ডিসমনিয়া, যেমন অনিদ্রা, হাইপারসোমনিয়া, নারকোলেপসি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া; প্যারাসোমনিয়াস হতে পারে। ’’
ইনসমনিয়া হচ্ছে এক ধরনের স্লিপ ডিস ওর্ডার যেখানে ঘুমাতে ডিফিকাল্টি ফেইস করা, একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ঘুমাতে না পেরে জেগে থাকা অথবা এর দুইটাই থাকতে পারে। ইনসমনিয়ার প্রতিকার জানতে আমাদের ইনসমনিয়ার চিকিৎসা এবং ঘুমের কিছু hygiene আছে তা মেনে চলতে হবে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ঘুম জরুরি। ভালো ঘুমের জন্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা জরুরি।
প্রথমত আমাদের ঘুমের পরিবেশ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। আপনি যেখানে ঘুমাবেন সেই ঘরটি যেন আপনার পরিচিত এবং আরামদায়ক হয়। সাধারণত দেখা যায় নতুন কোনো অপরিচিত জায়গায় গেলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঘরটি যেনো শান্ত, ছিমছাম এবং অন্ধকার হয়।
দ্বিতীয়ত, কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। যেমন রুটিন করে বিছানায় যাওয়া, ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা। যখন ক্লান্ত থাকবেন শুধু সেই সময়টায় বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করা, ঘুমাতে যাবার পূর্বে যাবতীয় সমস্যা নিয়ে চিন্তা করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
এছাড়াও যে অভ্যাসগুলো আমাদের কমাতে হবে সেগুলো হচ্ছে— বিকালের পরে শরীরচর্চা, দিনের শেষ সময়ে চা/কফি এড়িয়ে চলা, বিছানায় বসে ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল ফোন অথবা টেলিভিশন দেখা এভয়েড করা, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান পরিহার করা, দিনে অতিরিক্ত ঘুমানো, অতিরিক্ত লেইট মিল পরিহার করা এবং সজাগ অবস্থায় বিছানায় অতিরিক্ত সময় ব্যায় করা।
এগুলো মেনে চললে সহজেই আপনি ইনসোমনিয়া অথবা অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তারপরেও ঘুম নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এর শরণাপন্ন হবেন।