কর্মস্থলে যাতায়াতে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব অনেকেই মানছেন না। এতে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সাইকেলে ঝুঁকছেন কর্মজীবীরা। বিকল্প বাহন হিসেবে তারা ব্যবহার করছেন বাইসাইকেল। করোনাকালে সাইকেলের বিশেষ চাহিদা থাকায় খুশি উৎপাদক ও বিক্রেতারাও।
৩১ মে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার আগেই নতুন সাইকেল কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, বাসে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে অনলাইন থেকে সাইকেল কিনেছি। সাইকেলে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করছি। প্রতিদিন ব্যয়ামও হচ্ছে।
উত্তরা থেকে মিরপুরে সাইকেলে যাতায়াত করেন হাসনাত শোয়েব। চাকরি করেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, বাসা থেকে অফিস পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার। প্রতিদিন সাইকেলে অফিস করছি। করোনার ঝুঁকি রোধে চলাচলের জন্য সাইকেল উত্তম। তবে ঢাকার রাস্তায় আলাদা সাইকেল লেন থাকলে ভালো হতো।
রিয়াদ আহসানের অফিস মিরপুর। থাকেন রামপুরায়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, বাসে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। প্রতিদিন করোনা রোগী বাড়ছে। গণপরিহনে যাচ্ছি না। সাইকেল কিনে যাতায়াত শুরু করেছি।
সাইকেল বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুইমাস করোনার কারণে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠান ও দোকান খুলে দেওয়ার পর সাইকেলের বিক্রি বেড়েছে।
বংশালের ওমেক্স সাইকেল স্টোরের মালিক আজিজুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, আগের তুলনায় সাইকেল বিক্রি অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি সাইকেল আগের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বংশালের আরেক সাইকেল ব্যবসায়ী পারভেজ রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, এখন চাকরীজীরাই বেশি সাইকেল কিনছেন। সবার পছন্দ মিড রেঞ্জের মধ্যে। তবে আমরা ৭ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকারও বেশি দামের সাইকেল বিক্রি করি।
২০১৩ সালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বাজারে আনে দুরন্ত বাইসাইকেল। প্রাণ আরএফএলের এজিএম (জনসংযোগ) কে এম জিয়াউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, সারা দেশে আমাদের ৯৫টি দুরন্ত গ্যালারিতে সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। আট ক্যাটাগরিতে ৬০ মডেলের সাইকেল রয়েছে। অনলাইন এবং অফলাইনে—দুই প্লাটফর্মেই বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপদ বাহন হিসেবে সবাই সাইকেল কিনছেন।
এদিকে, সাইকেলের উপকারিতা তুলে ধরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, সাইকেল মূলত শারিরিক শ্রমে চলে। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন সাইকেলে অফিসে যাতায়াত করলে তার ব্যয়াম হচ্ছে। এছাড়া এ বাহন থেকে কার্বণ গ্যাস নিঃসরণ হয় না। ফলে ওজন স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব মানতে অনেকে সাইকেল ব্যবহার করছেন, এটা ভালো লক্ষণ। উন্নত দেশগুলোতে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকে। অনেক দেশের মন্ত্রী-এমপিরা সাইকেলে চড়ে অফিসে যান। আমরাও সেটি করতে পারি। এজন্য সাইকেল চালকদের উৎসাহিত করতে ভবিষ্যতে ঢাকায় সাইকেল লেন চালু করা উচিত।
নূর/সাইফ