করোনাভাইরাসে রোগী সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এমন অভিযোগ আসছে। ঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে সম্প্রতি কয়েকজনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
সম্প্রতি শ্বাসকষ্টে থাকায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পঞ্চাশোর্ধ্ব সোলাইমান মিয়াকে নিয়ে যান তার ছেলে রুহেল মিয়া। তার শ্বাসকষ্ট দেখে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক করোনার সার্টিফিকেট আনতে বলেন। সার্টিফিকেট না থাকায় ওই হাসপাতালের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে পথে সোলাইমান মারা যান।
রুহেল মিয়া বলেন, করোনা সন্দেহে বাবার চিকিৎসা হয়নি। অথচ তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল। ডাক্তারকে এটা বারবার বলার পরও করোনা পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন।
মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম ছগির হৃদরোগে আক্রান্ত হলে, তাকে নগরীর একটি সরকারি ও দুই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা পাননি। পরে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে চট্টগ্রামের পার্ক ভিউ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির কিছু সময় পরে তিনি মারা। তার পরিবারের অভিযোগ, সময় মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় শফিউল আলমের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন।
গত ১১ মে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকগুলোতে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া যাবে না। রেফার করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করে রেফার করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব রোগী কিডনিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা নিচ্ছে—তারা কোভিড আক্রান্ত না হয়ে থাকলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়গুলো সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রোগীদের প্রতি অবহেলা, চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোগী না নেওয়ার বিষয়ে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের একজন অধ্যাপক বলেন, অনেকক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে ডায়াগনোসিস করা যায় না যে রোগী কোভিড-১৯ আক্রান্ত কি-না। চিকিৎসকরা সন্দিহান থাকেন রোগীকে নিয়ে। এজন্য পরীক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু অনেকে নানা কারণে পরীক্ষা করাতে পারে না। অনেক সময় রোগী বা তাদের স্বজনরা ভুল তথ্য দেয়। এ কারণেও সঠিক চিকিৎসা হয় না।
শ্যামলীর একটি বেসকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুহুল আবেদিন বলেন, এ সময় ক্রিটিক্যাল রোগী পেলে কেউ ধরতে চায় না। আবার বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ল্যাব নেই। মালিকপক্ষ থেকেই ঝুঁকি না নিতে বলা হয়। তারপরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেজ্ঞ রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সব হাসপাতালে জরুরি বিভাগ চালু আছে। এরপরও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা অবহেলা করছেন এমন অভিযোগ মানতে নারাজ মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহিত কামাল। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবায় চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও রোগীর কিছু হলে তার স্বজনরা চিকিৎসকদের ওপর দায় চাপান। এতে চিকিৎসকরা মানসিকভাবে কষ্ট পান। কিন্তু একজন চিকিৎসকই জানেন রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলে তো হবে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, চিকিৎসা সেবা পাওয়া সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোগী চিকিৎসা না পেলে ওই হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করা যাবে। সেখানে সমাধান না পেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। চিকিৎসা সেবা দেবে বলেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসান বলেন, নন কোভিড সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের সব ধরনের সেবা দিতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নূর/সাইফ