করোনার এই দুঃসময়ে ঘটছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়ে তাদের অনেককেই ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথে গত শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বেসরকারি চাকরিজীবী শিহাবুল ইসলাম। জনশূন্য গলিপথে যখন দুই ছিনতাইকারী তাকে ঘিরে ধরে তখন হতভম্ব হয়ে পড়েন তিনি। ছুরি দেখিয়ে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয় মোবাইল, নগদ টাকা। প্রাণ ভয়ে সব দিয়েও দেন শিহাবুল। বাসায় ফেরার পর পরিবারের পরামর্শে থানায় অভিযোগ করতে গেলে তাকে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শিহাবুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় ফিরছিলাম। মূল সড়ক থেকে গলিতে ঢুকতেই দুজন ছেলে আমাকে ডাক দেয়। তাদের দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু মুহূর্তেই তারা আমাকে ঘিরে অন্ধকার জায়গায় নেয়। ছুরি দেখিয়ে আমার কাছে যা আছে দিয়ে দিতে বলে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার (৯ জুন) ঢাকার কাফরুল এলাকা থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ পরিবহনের একটি গাড়িও খোয়া যায়। পরে কাফরুল থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে সেটি উদ্ধার ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু শিহাবুল ইসলাম বা বিদ্যানন্দের গাড়ি নয়, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ার পর থেকে রাজধানীর মূল সড়ক ও অলিগলি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে মানুষের চলাফেরা অনেকাংশে কমেছে। একটু রাত হলেই গলির রাস্তাগুলো নিরব হয়ে যায়। এই সুযোগে ওৎ পেতে থাকে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। একা কাউকে পেলেই সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেয় সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র।
আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করোনার পর অপরাধ কমেছে দাবি করলেও সূত্র বলছে, রাজধানীতে নিয়মিত চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ হচ্ছে। এসব অপরাধে বেশিরভাগ সময় মাদকাসক্তরা জড়িত। এছাড়া কিশোর বয়সীরাও চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, আগে যেখানে মানুষজন বেশি থাকত—চোর, ছিনতাইকারী চক্র সেখানে অপরাধ সংঘটিত করতো। তবে করোনার কারণে সেই সুযোগ কমে গেছে। সাধারণ ছুটি শুরুর দিকে বাসা বাড়িতে চুরির করলেও এখন এরা রাস্তায় ছিনতাই করছে। রাজধানীতে এ ধরনের ছোট ছোট অনেকগুলো চক্র রয়েছে।
র্যাব-২ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন ফারুকী রাইজিংবিডিকে বলেন, ডাকাতি, ছিনতাই, সিঁদেল ও ছিচকে চুরির ঘটনা ঘটছে এমন খবরের পর আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার এবং মাদকসেবী। তবে নজরদারি অব্যাহত আছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ চুরি, ছিনতাইয়ের কারণ মাদক। মাদকের টাকা জোগাড় করতে সংঘবদ্ধ চক্র এসব অপরাধ করে। মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করা হলেও আবার রাজধানীতে ঢুকছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে মাদকের হোতাদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। মাদকের সরবরাহ বন্ধ করা গেলে অপরাধ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, যেকোনও ধরনের অপরাধ দমনে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। তবে আগের চেয়ে ঢাকায় অপরাধ অনেকাংশে কমেছে। নূর/সাইফ