রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর বা অপসারণ বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন যেমন হচ্ছে, তেমনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন লোকজন। এরই মধ্যে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর বন্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার তিন সংগঠন ও ব্যক্তি।
চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। রিটে এক নম্বর পিটিশনার হিসেবে আছেন ‘অভয়ারণ্য’ নামক প্রাণী কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি রুবাইয়া আহমেদ, দুই নম্বর পিটিশনার পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ও তিন নম্বর পিটিশনার অভিনেত্রী জয়া আহসান।
রিটকারীরা জানিয়েছেন, শুধু এবার কুকুর স্থানান্তর প্রশ্নে নয়, এর আগেও তারা প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় একাধিবার আদালতে মামলা করেছেন।
অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমেদ বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করছি। ২০১৪ সালে প্রাণী সংক্রান্ত পুরাতন যে আইন ছিল, সেটা নিয়ে এর আগে রিট করেছিলাম। এবার নতুন আইনের ভিত্তিতে রিট করেছি। আমাদের কথা হলো, কুকুরকে টিকা দিতে হবে, কুকুরকে বন্ধ্যা করতে হবে। অতীতে কুকুর নিধন করে দেখা গেছে, কোন লাভ হয়নি, বরং আরো ক্ষতি হয়েছে। আমরা কুকুর বন্ধ্যাকরণের জন্য কাজ করছি। ২০১৯ সালের নতুন আইনে কুকুর অপসারণ ও নিধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুকুর অপসারণ ও নিধন নীতি একে তো অকার্যকর, তার ওপর অমানবিক। আইনের ৭ ধারায় স্পষ্টভাবে লেখা আছে, কুকুর অপসারণ বা নিধন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, আইনে লেখা আছে, কোনো প্রাণীকে যদি মারার উদ্দেশ্যে না খাইয়ে রাখে, আঘাত করে বা অন্য জায়গায় ফেলে আসে, সেটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ডিএসসিসি (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণেই আমরা রিট আবেদন করেছি।’
রাকিবুল হক এমিল বলেন, ‘রিট আবেদনটির শুনানির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। প্রাণী কল্যাণে আমরা ২০১৬ সালে এ সংগঠন করেছি। শুধু কুকুর নয়, এর আগে আমরা বানর, ঘোড়া, শিয়াল নিয়ে কাজ করেছি।‘
কুকুর নিয়ে রিট করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুকুর যেহেতু মানুষের কাছে সহজেই আসে, তাই সে সহজে মানুষের ভালবাসা পায়, আবার অত্যাচারের শিকারও হয়। আমাদের সংগঠনের কাজ শুরু হয়েছিল কুকুর উদ্ধার নিয়ে। অনেকে কুকুরকে নির্যাতন করে, পা ভেঙে দেয়, গায়ে গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এসব কুকুরকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। আমরা এজন্য ক্লিনিক করেছি। প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় এ পর্যন্ত চারটি মামলার বাদী আমি। কয়েক বছর আগে রামপুরায় ১৬টি কুকুর জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়েছিল, ওই মামলার বাদী আমি। এ ঘটনায় আদালত ৬ মাসের জেল দিয়েছে। খুলনা ও যশোরেও আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।‘
কুকুরের আগে ‘বেওয়ারিশ’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে রাকিবুল হক এমিল বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানা না থাকলেই যদি বেওয়ারিশ হয়, তাহলে এ দেশের বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটি প্রাণী বেওয়ারিশ। তবে কেন বাঘ মারলে বা হরিণ আটকে রাখলে আইন কথা বলবে, আর কুকুর-বিড়াল নির্যাতনের শিকার হলে আইন দুর্বল ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। যুগ যুগ ধরে ঘোড়ার মতোই কুকুর এবং বিড়ালও মানুষের পরম বন্ধু হিসেবেই পরিচিত।‘
আরেক রিটকারী অভিনেত্রী জয়া আহসানের মন্তব্য জানতে একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ সেপ্টেম্ব রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। অভয়ারণ্যের সভাপতি রুবাইয়া আহমেদ, পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ও অভিনেত্রী জয়া আহসান এ রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে কুকুর স্থানান্তর ও ডাম্প করার বিষয়ে ডিএসসিসির কার্যক্রমের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। রিটে ডিএসসিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর ধারা-৭ অনুযায়ী বেওয়ারিশ কুকুরসহ কোনো প্রাণীকে অপসারণ, স্থানান্তর ও ফেলে দেওয়া যাবে না। অথচ অভিযোগ রয়েছে, ডিএসসিসির মৌখিক আদেশে টিএসসি ও ধানমন্ডি থেকে বেওয়ারিশ কুকুর ধরে মাতুয়াইলে নেওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে আরো বলা হয়েছে, ডিএসসিসি কুকুরের সংখ্যা কমানোর জন্য যে অমানবিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার সফলতার উদাহরণ নেই। এ ধরনের অমানবিক প্রকল্প বন্ধ ও প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর অধীন বিধি প্রণয়নের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।