রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে দুজন সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দুই শূন্যপদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পেতে অনেকেই চেষ্টা করছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে। কারা হচ্ছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে আইনজীবী মহলেও। গুরুত্বপূর্ণ এই পদ দুটিতে সরকার কাদের নিয়োগ দেবে- এ নিয়ে রয়েছে সবার মাঝে কৌতূহল।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি (১.ব্যক্তির আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পূক্ততা ২.সততা ৩. আইন পেশায় দক্ষতা) বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, নিয়োগের তালিকায় কয়েকজনের নাম উঠে আসছে আইনজীবীদের বিভিন্ন আলোচনা ও আড্ডায়। অ্যাডভোকেট শেখ আওসাফুর রহমান বুলু, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথের নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকেই দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের তিনজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন কোনো মন্তব্য করেননি।
যাদের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে শেখ আওসাফুর রহমান বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পক্ষে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও হয়েছিল। আইনজীবী হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। বাগেরহাটের আওয়ামী পরিবারের সন্তান শেখ আওসাফুর রহমান বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগের তালিকায় তার নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম অ্যাটর্নি জেনারেল থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগের তালিকায় বার বার অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজুর নাম উঠে এসেছে। দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগের পর আবার নতুন করে আলোচনায় আসছে তার নাম। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসা দুজন আইন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, মোতাহার হোসেন সাজু দীর্ঘদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসনিক কাজ দক্ষ হাতে সামলিয়েছেন। আইনজীবী মহলেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী পরিবারের সন্তান মোতাহার হোসেন সাজু দীর্ঘদিন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সবদিক বিবেচনায় দুই পদের একটিতে মোতাহার হোসেন সাজু অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগের তালিকায় অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়ার নামও শোনা যাচ্ছে। নোয়াখালীর আওয়ামী পরিবারের সন্তান আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পূক্ত। ২০১৬-১৭ সেশনে সুপ্রিম কোর্ট বারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদেরও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আইন পেশায় তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া নিয়োগ পেতে পারেন বলে একাধিক প্রভাবশালী আইনজীবী নেতা রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জুনিয়র হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। আইনজীবী হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য তিনি। শাহ মঞ্জরুল হক গত বছর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছিলেন। সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি নিয়োগ পেতে পারেন বলে কয়েকজন আইনজীবী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ড. কামাল হোসেনের জুনিয়র হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মধ্যবয়সী আইনজীবীদের মধ্যে তার সংবিধান ও কোম্পানি আইনে বিশেষ পারদর্শিতা সবার জানা। সরকারের শীর্ষ মহলে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ দীর্ঘসময় ধরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। গুরুত্বপূর্ণ সব মামলার নথিপত্র তার নখদর্পণে। তাই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা ও মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির পদত্যাগ করেন। তাদের পদত্যাগের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দুটি পদ শূন্য হয়েছে।